পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO বিবিধ প্ৰবন্ধ এই কথায় যতটা চরিত্র পরিস্ফুট হইল, শত পৃষ্ঠা লিখিয়াও ততটা প্ৰকাশ করা দুঃসাধ্য। এ স্থলে কোন বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন হইল না-দ্ৰৌপদীকে তেজস্বিনী বা গকিিবতা বলিয়া ব্যাখ্যাত করিবার আবশ্যকতা হইল না । অথচ রাজদুহিতার দুর্দমনীয় গৰ্ব্ব নিঃসঙ্কোচে বিস্মৃফারিত হইল । ইহার পর দু্যতিক্ৰীড়ায় বিজিতা দ্রৌপদীর চরিত্র অবলোকন কর। মহাগৰ্বিবত, তেজস্বী, এবং বলধারী ভীমাৰ্জ্জুন দূতমুখে বিসজ্জিত হইয়াও কোন কথা কহেন নাই ; শত্রুর দাসত্ব নিঃশব্দে স্বীকার করিলেন। এ স্থলে তঁহাদিগের অনুগামিনী দাসীর কি করা কৰ্ত্তব্য ? স্বামিকর্তৃক দূতমুখে সমৰ্পিত হইয়া স্বামিগণের ন্যায় দাসীত্ব স্বীকার করাই আৰ্য্যনারীর স্বভাবসিদ্ধ। দ্রৌপদী কি করিলেন ? তিনি প্ৰতিকামীর মুখে দু্যতবার্তা এবং দুৰ্য্যোধনের সভায় তঁহার আহবান শুনিয়া বলিলেন, “হে সূতনন্দন ! তুমি সভায় গমন করিয়া যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা কর, তিনি অগ্ৰে আমাকে, কি আপনাকে দূতমুখে বিসর্জন করিয়াছেন। হে সূতাত্মজা! তুমি যুধিষ্ঠিরের নিকট এই বৃত্তান্ত জানিয়া এ স্থানে আগমনপূর্বক আমাকে লইয়া যাইও । ধৰ্ম্মরাজ কিরূপে পরাজিত হইয়াছেন, জানিয়া আমি তথায় গমন করিব।” দ্ৰৌপদীর অভিপ্ৰায়, দাসত্ব স্বীকার করিবেন না । দ্রৌপদীর চরিত্রে দুইটি লক্ষণ বিশেষ সুস্পষ্ট—এক ধৰ্ম্মাচরণ, দ্বিতীয় দৰ্প । দৰ্প, ধৰ্ম্মের কিছু বিরোধী, কিন্তু এই দুইটি লক্ষণের একাধারে সমাবেশ অপ্ৰকৃত নহে { মহাভারতকার এই দুই লক্ষণ অনেক নায়কে একত্রে সমাবেশ করিয়াছেন। ভীমসেনে, অৰ্জ্জুনে, অশ্বথামায়, এবং সচরাচর ক্ষত্ৰিয়চরিত্রে এতদুভয়কে মিশ্রিত করিয়াছেন । ভীমসেনে দৰ্প পূর্ণমাত্রায়, এবং অৰ্জ্জুনে ও অশ্বথমায় অৰ্দ্ধমাত্রায় দেখা যায়। দৰ্প শব্দে এখানে আত্মশ্লাঘাপ্রিয়তা নির্দেশ করিতেছি না ; মানসিক তেজস্বিতাই আমাদের নিৰ্দেশ্য । এই তেজস্বিতা দ্রৌপদীতেও পূর্ণমাত্রায় ছিল। অৰ্জ্জুন এবং অভিমনুতে ইহা আত্মশক্তিনিশ্চয়তায় পরিণত হইয়াছিল ; ভীমসেনে ইহা বলবৃদ্ধির কারণ হইয়াছিল ; দ্রৌপদীতে ইহা ধৰ্ম্মবৃদ্ধির কারণ হইয়াছে। সভাতলে দ্ৰৌপদীর দর্প ও তেজস্বিতা আরও বদ্ধিত হইল। তিনি দুঃশাসনকে বলিলেন, “যদি ইন্দ্ৰাদি দেবগণও তোর সহায় হন, তথাপি রাজপুত্রেরা তোকে কখনই ক্ষমা করিবেন না।” স্বামিকুলকে উপলক্ষ করিয়া সর্বসমীপে মুক্তকণ্ঠে বলিলেন, “ভারতবংশীয়গণের ধৰ্ম্মে ধিক ! ক্ষত্ৰধৰ্ম্মজ্ঞগণের চরিত্র একেবারেই নষ্ট হইয়া গিয়াছে।” ভীষ্মাদি গুরুজনকে মুখের উপর তিরস্কার করিয়া বলিলেন, “বুঝিলাম-দ্রোণ, ভীষ্ম ও মহাত্মা বিদুরের কিছুমাত্র স্বত্ব নাই।” কিন্তু অবলার তেজ কতক্ষণ থাকে ! মহাভারতের কবি,