পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WUe8 বিবিধ প্ৰবন্ধ গণিত, জ্যোতিষ, অভিধান, ইত্যাদি নানাবিধ সংস্কৃত গ্রন্থে আজিও ভারতবর্ষ সমাচ্ছন্ন রহিয়াছে। এই লিপিবদ্ধ অনুত্তরণীয় প্রাচীন তত্ত্বসমুদ্র মধ্যে কোথাও ঘূণাক্ষরে এমন কথা নাই যে, প্ৰাচীন আৰ্য্যদিগের মধ্যে স্ত্রালোকের বহুবিবাহ ছিল । তথাপি পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা একা দ্ৰৌপদীর পঞ্চ স্বামীর কথা শুনিয়া সিদ্ধান্ত করিলেন যে, প্ৰাচীন ভারতবর্ষীয়দিগের মধ্যে, স্ত্রীলোকদিগের বহুবিবাহ প্ৰচলিত ছিল। এই জাতীয় একজন পণ্ডিত ( Fergusson সাহেব ) ভগ্ন অট্টালিকার প্রাচীরে গোটাকত বিবস্ত্ৰ স্ত্রীমূৰ্ত্তি দেখিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, প্রাচীন ভারতবর্ষে স্ত্রীলোকেরা কাপড় পরিত না-সীতা, সাবিত্রী, দ্রৌপদী, দময়ন্তী প্রভৃতি শ্বশুর ভাসুরের সম্মুখে নগ্নাবস্থায় বিচরণ করিত ! তাই বলিতেছিলাম-এই সকল পণ্ডিতদিগের রচনা পাঠ করার অপেক্ষা মহাপাতক সাহিত্যসংসারে দুর্লভ । দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী, হইবার স্কুল তাৎপৰ্য্য কি, এ কথার মীমাংসা করিবার আগে বিচার করিতে হয় যে, এ কথাটা আদৌ ঐতিহাসিক, না কেবল কবিকল্পনা মাত্র ? সত্য সত্যই দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী ছিল, না কবি এইরূপ সাজাইয়াছেন ? মহাভারতের যে ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে, তাহা প্ৰবন্ধান্তরে আমি স্বীকার করিয়াছি ও বুঝাইয়াছি। কিন্তু মহাভারতের ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলিয়াই যে উহার সকল কথাই ঐতিহাসিক, ইহা সিদ্ধ হয় না । যাহা স্পষ্টতঃ প্ৰক্ষিপ্ত, তাহা ঐতিহাসিক নহে-এ কথা ত স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু দ্রৌপদী-চরিত্র প্রক্ষিপ্ত বলা যায় না-দ্রৌপদীকে লইয়াই মৌলিক মহাভারত। তা হউক।--কিন্তু মৌলিক মহাভারতে যত কথা আছে, সকলই যে ঐতিহাসিক এবং সত্য, ইহা বলাও দুঃসাহসের কাজ ; যে সময়ে কবিই ইতিহাসবেত্তা, ইতিহাসবেত্তাও কবি, সে সময়ে কাব্যেও ইতিহাস বিমিশ্রণ বড় সহজ । সত্য কথাকে কবির স্বকপোলকল্পিত ব্যাপারে রঞ্জিত করা বিচিত্র নহে। দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরের মহিষী ছিলেন, ইহা না হয় ঐতিহাসিক বলিয়া স্বীকার করা গেল-তিনি যে পঞ্চ পাণ্ডবের মহিষী, ইহাও কি ঐতিহাসিক সত্য বলিয়। স্বীকার করিতে হইবে ? এই দ্রৌপদীর বহুবিবাহ ভিন্ন ভারতবর্ষীয় গ্ৰন্থসমুদ্র মধ্যে ভারতবর্ষীয় আৰ্যদিগের মধ্যে স্ত্রীগণেশ বহুবিবাহের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না । বিধবা হইলে স্ত্রীলোক অন্য বিবাহ করিত, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এক কালে কেহ একাধিক পতির ভাৰ্য্যা ছিল, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কখন দেখা গিয়াছে যে, কোন মনুষ্যের প্রতি হস্তে ছয়টি করিয়া দুই হস্তে দ্বাদশ অঙ্গুলি আছে ; কখন দেখা গিয়াছে যে, কোন মনুষ্য চক্ষুহীন হইয়া জন্মগ্রহণ করে। এমন একটি দৃষ্টান্ত দেখিয়া সিদ্ধান্ত করা যায় না যে, মনুষ্যজাতির হাতের আঙ্গুল বারটি, অথবা মনুষ্য অন্ধ হইয়া জন্মে। তেমনি কেবলি দ্রৌপদীর বহুবিবাহ