পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bሥጋ” বিবিধ প্ৰবন্ধ শারীরতত্ত্ববিদেরা বলেন যে, খাদ্যের রাসায়নিক বিশ্লেষণ সম্পাদনা করিলে দেখা যায় যে, তাহাতে ষ্টাৰ্চ, গ্রটেন প্রভৃতি কয়েকটি সামগ্ৰী আছে। গ্রটেন নাইট্ৰজেন-প্রধান সামগ্ৰী।। তাহাতেই শরীরের পুষ্টি। মাংসপেশী প্রভৃতির পুষ্টির জন্য এই সামগ্রীর বিশেষ প্ৰয়োজন। ভাতে ইহা অতি অল্প পরিমাণে থাকে। মাংসে বা গমে ইহা অধিক পরিমাণে থাকে। এই জন্য মাংসভোজী এবং গোধূমভোজীদিগের শরীর অধিক বলবান-"ভ্যেতো।” জাতির শরীর দুর্বল। ময়দায় গ্রটেন শতভাগে দশভাগ থাকে। (৪); মাংসে (Flibrin বা Musculine) ১৯ ভাগ। (৫) ; এবং ভাতে ৭ কি ৮ ভাগ মাত্র থাকে। (৬)। সুতরাং বাঙ্গালি দুর্বল হইবে বৈ কি। কেহ কেহ বলেন, বাল্যবিবাহই বাঙ্গালির পরমশক্রি-বাল্যবিবাহের কারণেই বাঙ্গালির শরীর দুর্বল। যে সন্তানের মাতা পিতা অপ্ৰাপ্তবয়ঃ, তাহদের শরীর ও বল চিরকাল অসম্পূর্ণ থাকিবে, এবং যাহারা অল্পবয়স হইতে ইন্দ্ৰিয়সুখে নিরত, তাহারা বলবান হইবার সম্ভাবনা কি ? বাঙ্গালি মনুষেরই কি, বাঙ্গালি পশুরই কি, দুর্বলতা যে জলবায়ু বা মৃত্তিকার গুণ, তাহা সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু জলের বা বায়ুর বা মৃত্তিকার কোন দোষের এই কুফল, তাহা কোন পণ্ডিতে অবধারিত করেন নাই । কিন্তু এই দুর্বলতার যে সকল কারণ নিদিষ্ট হইয়াছে বা উল্লিখিত হইল, তাহাতে এমত ভরসা করা যায় না যে, অল্পকালে সে দুর্বলতা দূর হইবে। তবে ইহাও বলা যাইতে পারে যে, এমত কোন নিশ্চয়তা নাই যে, কোন কালে এ সকল কারণ অপনীত হইতে পারে না । বাল্যবিবাহই যদি এ দুর্বলতার কারণ হয়, তবে এমন ভরসা করা যাইতে পারে যে, সামাজিক রীতির পরিবর্তনে এ কুপ্ৰথা সমাজ হইতে দূর হইবে ; এবং বাঙ্গালির শরীরে বলসঞ্চার হইবে। যদি চাল এ অনিষ্টের কারণ হয়, তবে এমন ভরসা করা যাইতে পারে যে, গোধূমাদির চাষ এ দেশে বৃদ্ধি করাইলে, বাঙ্গালি ময়দা খাইয়া বলিষ্ঠ হইবে। এমন কি, কালে জলবায়ুরও পরিবর্তন হইতে পারে। এক্ষণে মনুষ্যবাসের অযোগ্য যে সুন্দরবন, তাহা এককালে বহুজনাকীর্ণ ছিল, এমত প্রমাণ আছে। ভূতত্ত্ববিদেরা বলেন যে, ইউরোপীয় অনেক প্ৰদেশ, এক্ষণকার অপেক্ষা উষ্ণতর ছিল, এবং তথায় সিংহ হস্তী প্রভৃতি উষ্ণদেশবাসী জীবের আবাস ছিল । আবার এককালে সেই সকল প্ৰদেশ হিমশিলায় নিমগ্ন ছিল। সে সকল যুগান্তরের কথা-সহস্ৰ সহস্ৰ যুগে সে সকল পরিবর্তন (8) Johnstone's Chemistry of Common Life Vol. 1, p. 100. (e) Ibid, p. 125. (9) Ibid, p. 101.