পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

წა თ বিবিধ প্ৰবন্ধ দ্বিতীয় উত্তরে আমরা যাহা বলিতেছি, বাঙ্গালার সর্বত্র, সর্ব নগরে, সৰ্ব্ব গ্রামে সকল বাঙ্গালির হৃদয়ে তাহা লিখিত হওয়া উচিত। বাঙ্গালি শারীরিক বলে দুর্বল--- তাহাদের বাহুবল হইবার সম্ভাবনা নাই-তবে কি বাঙ্গালির ভরসা নাই ? এ প্রশ্নে আমাদিগের উত্তর এই যে, শারীরিক বল বাহুবল নহে। মনুষ্যের শারীরিক বল অতি তুচ্ছ। তথাপি হস্তী অশ্ব প্রভৃতি মনুষ্যের বাহুবলে শাসিত হইতেছে। মানুন্যে মনুষ্যে তুলনা করিয়া দেখ। যে সকল পার্বত্য বন্য জাতি হিমালয়ের পশ্চিম ভাগে বাস করে, পৃথিবীতে তাহদের ন্যায় শারীরিক বলে বলবান কে ? এক এক জন মেওয়াওয়ালার চপেটাঘাতে অনেক সেলর গোরাকে ঘূর্ণ্যমান হইয়া আঙ্গুর পেস্তার আশা পরিত্যাগ করিতে দেখা গিয়াছে। তবে গোরা সমুদ্র পার হইয়া আসিয়া ভারত অধিকার করিল-কাবুলির সঙ্গে ভারতের কেবল ফলবিক্রয়ের সম্বন্ধ রহিল কেন ? অনেক ভারতীয় জাতি হইতে ইংরেজেরা শারীরিক বলে লঘু। শারীরিক বলে শীকেরা ইংরেজ অপেক্ষা বলিষ্ঠ । তথাপি শীক ইংরেজের পদানত । শারীরিক বল বাহুবল କh(୧) । উদ্যম, ঐক্য, সাহস এবং অধ্যবসায়, এই চারিটি একত্ৰিত করিয়া শারীরিক বলা ব্যবহার করার যে ফল, তাহাই বাহুবল । যে জাতির উদ্যম, ঐক্য, সাহস এবং অধ্যবসায় আছে, তাহদের শারীরিক বল যেমন হউক না কেন, তাহদের বাহুবল আছে । এই চারিটি বাঙ্গালির কোন কালে নাই, এ জন্য বাঙ্গালির বাহুবল নাই । কিন্তু সামাজিক গতির বলে এ চারিটি বাঙ্গালিচরিত্রে সমবেত হওয়ার অসম্ভাবনা কিছুই নাই। বেগবৎ অভিলাষ হৃদয়মধ্যে থাকিলে উদ্যম জন্মে। অভিলাষ মাত্রেই কখন উদ্যম জন্ম না। যখন অভিলাষ এরূপ বেগ লাভ করে যে, তাহার অপূর্ণাবস্থা বিশেষ ক্লেশকর হয়, তখন অভিলখিতের প্রাপ্তির জন্য উদ্যম জন্মে। অভিলামের অপুৰ্ত্তিজন্য যে ক্লেশ, তাহার এমন প্ৰবলতা চাহি যে, নিশ্চেষ্টতা এবং আলস্যের ধোঁ সুখ, তাহা তদভাবে সুখ বলিয়া বোধ না হয়। এরূপ বেগযুক্ত কোন অভিলাষ বাঙ্গালির হৃদয়ে স্থান পাইলে, উদ্যম জন্মিবে। ঐতিহাসিক কালমধ্যে এরূপ কোন বেগযুক্ত অভিলাষ বাঙ্গালির হৃদয়ে কখন স্থান পায় নাই । যখন বাঙ্গালির হৃদয়ে সেই এক অভিলাষ জাগরিত হইতে থাকিবে, যখন বাঙ্গালি মাত্রেরই হৃদয়ে সেই ত ভিলাষের বেগ এরূপ গুরুতর হইবে যে, সকল বাঙ্গালিই তজন্য আলস্যসুখ তুচ্ছ বোধ করিবে, তখন উদ্যামের সঙ্গে ঐক্য মিলিত হইবে। সাহসের জন্য আর একটু চাই। চাই যে, সেই জাতীয় সুখের অভিলাষ আরও