পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
বিবিধ সমালোচন।

মহাবীরপ্রকৃত শ্রীরাম সভামধ্যে সীতাপবাদের কথা শুনিলেন। শুনিয়া সভাসদগণকে কেন এই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন সকলে কি এইরূপ বলে?” সকলে তাহাই বলিল। তখন ধীরপ্রকৃতি, রাজা আর কাহাকে কিছু না বলিয়া সভা হইতে উঠিয়া গেলেন। মূর্চ্ছাও গেলেন না,—মাতাও কুটিলেন না—ভূমে গড়াগড়ি দিলেন না। পরে নিভৃত হইয়া, কাতরতাশূন্যা ভাষায় ভ্রাতৃবর্গকে ডাকাইলেন। ভ্রাতৃগণ আসিলে, পর্ব্বতবৎ অবিচলিত থাকিয়া, তাহাদিগকে আপন অভিপ্রায় জানাইলেন। বলিলেন, “আমি সীতাকে পবিত্রা জানি—সেই জন্যই গ্রহণ করিয়াছিলাম—কিন্তু এক্ষণে এই লোকাপবাদ! অতএব আমি সীতাকে ত্যাগ করিব।” স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইয়া, লক্ষ্মণের প্রতি রাজাজ্ঞা প্রচার করিলেন, “তুমি সীতাকে বনে দিয়া আইস।” যেমন অন্যান্য নিত্যনৈমিত্তিক রাজকার্য্যে রাজানুচরকে রাজা নিযুক্ত করেন, সেইরূপ লক্ষ্মণকে সীতাবিসর্জ্জনে নিযুক্ত করিলেন। চক্ষে জল, কিন্তু একটিও শোকশূচক কথা ব্যবহার করিলেন না। “মর্ম্মাণি কৃন্ততি” ইত্যাদি বাক্য সীতাবিয়োগাশঙ্কায় নহে— অপবাদ সম্বন্ধে। তথাপি তাঁহার এই কয়টি কথায় কত দুঃখই আমরা অনুভূত করিতে পারি! এইস্থল উত্তরকাণ্ড হইতে উদ্ধৃত এবং অনুবাদিত করিলাম।

তস্যৈবং ভাষিত শ্রুত্বা রাঘবঃ পরমার্ত্তবৎ।
উবাচ সুহৃদঃ সর্ব্বান্ কথমেতদ্বদন্তি মাম্॥
সর্ব্বেভু শিরসাভূমাবভিবাদ্য প্রণম্য চ।
প্রত্যূচু রাঘবং দীনমেবমেতরসংশয়ঃ॥
শ্রুত্বাতুবাক্যংকাকুৎস্থঃ সর্ব্বেবাং সমুদীরিতম্।
বিষর্জ্জয়ামাস তদা বয়স্যান শত্রুসূদনঃ॥