পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
বিবিধ সমালোচন।

 আর রাম সহ্য করিতে পারিলেন না। ভ্রান্তি জন্মিতে লাগিল। তখন উচ্চৈঃস্বরে রাম ডাকিতে লাগিলেন, “চণ্ডি জানকি, এই যে চারিদিকে তোমাকে দেখিতেছি—কেন দয়া কর না? আমার বুক ফাটিতেছে। দেহবন্ধ ছিঁড়িতেছে, জগৎ শূন্য দেখিতেছি। নিরন্তর অন্তর জ্বলিতেছে; আমার বিকল অন্তরাত্মা অবসন্ন হইয়া অন্ধকারে ডুবিতেছে; মোহ আমাকে চারিদিক্ হইতে আচ্ছন্ন করিতেছে; আমি মন্দভাগ্য—এখন কি করিব?” বলিতে২ রাম মুর্চ্ছিত হইলেন।

 ছায়ারূপিণী তমসার সঙ্গে আদ্যোপান্ত নিকটে ছিলেন। বাসন্তী রামকে সীতা পীড়িত করিতেছেন দেখিয়া, সীতা পুনঃ২ তাঁহাকে তিরস্কার করিতেছিলেন—কতবার রামের রোদন শুনিয়া আপনি মর্ম্মপীড়িত হইতেছিলেন, আবার সীতা রাম চন্দ্রের দুঃখের কারণ হইলেন বলিয়া, কত কাতরোক্তি করিতেছিলেন। আবার রামকে মুর্চ্ছিত দেখিয়া সীতা কাঁদিয়া উঠিলেন, “আর্য্যপুত্র। তুমি যে সকল জীবলোকের মঙ্গলাধার! তুমি এ মন্দভাগিনীকে মনে করিয়া বার২ সংশয়িতজীবন হইতেছ? আমি যে মলেম।” এই বলিয়া সীতাও মুর্চ্ছিতা প্রায়। তমসা এবং বাসন্তী তাঁহাকে উঠাইলেন। সীতা সসম্ভ্রমে রামের ললাট স্পর্শ করিলেন। কি স্পর্শসুখ! রাম যদি মৃৎপিণ্ড হইয়া থাকিতেন, তাহা হইলেও তাঁহার চেতনা হইত। আনন্দনিমিলিতলোচনে স্পর্শসুখ অনুভব করিতে লাগিলেন, তাহার শরীরধাতু অন্তরে বাহিরে অমৃতময় প্রলেপে যেন লিপ্ত হইল—জ্ঞান লাভ করিলেও আনন্দেতে আর এক প্রকার মোহ


    তাঁহার পথ চাহিয়া থাকিতে। সীতা আসিয়া তোমাকে বিশেষ **নায়মান দেখিয়া, তোমাকে প্রণাম করিবার জন্য পদ্মকলিকা তুল্য অঙ্গুলির দ্বারা কি সুন্দর অঞ্জলিবদ্ধ করিতেন।