পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
বিবিধ সমালোচন।

আসিয়াছিল, তিনি বাসন্তীকে বলিলেন, “সখি, তুমি একবার ধর।” সীতা সেই অবকাশে হাত ছাড়াইয়া লইলেন। লইয়া, স্পর্শসুখজনিত স্বেদরোমাঞ্চকম্পিতকলেবরা হইয়া পবনকম্পিত নবজলকণাসিক্ত স্ফুটকোরক কদম্বের ন্যায় দাঁড়াইয়া রহিলেন। মনে করিলেন, “কি লজ্জা, তমসা দেখিয়া কি মনে করিতেছেন। ভাবিতেছেন, এই ইহাকে ত্যাগ করিয়াছেন, আবার ইহার প্রতি এই অনুরাগ।”

 রাম ক্রমে জানিতে পারিলেন, যে কই, কোথা সীতা— সীতা ত নাই। তখন রামের শোকপ্রবাহ দ্বিগুণ ছুটিল। রোদন করিয়া, ক্রমে শান্ত হইয়া বাসন্তীকে বলিলেন, “আর কতক্ষণ তোমাকে কাঁদাইব? আমি এখন যাই।” শুনিয়া সীতা উদ্বেগের সহিত তমসাকে অবলম্বন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ভগবতি তমসে! আর্য্যপুত্ত্র যে চলিলেন?” তমসা বলিলেন, “চল, আমরাও যাই।” সীতা বলিলেন, “ভগবতি ক্ষমা কর! আমি ক্ষণকাল এই দুর্ল্লভ জনকে দেখিয়া লই।” কিন্তু বলিতে২ এক বজ্রতুল্য কঠিন কথা সীতার কানে গেল, রাম বাসন্তীর নিকট বলিতেছেন, “অশ্বমেধের জন্য আমার এক সহধর্ম্মিণী আছে—” সহধর্ম্মিণী! সীতা কম্পিতকলেবরা হইয়া মনে২ বলিলেন, “আর্য্যপুত্ত্র! কে সে?” এই অবসরে রামও কথা সমাপ্ত করিলেন, “সে সীতার হিরণ্ময়ী প্রতিকৃতি।” শুনিয়া সীতার চক্ষের জল পড়িতে লাগিল; বলিলেন, “আর্য্যপুত্ত্র! এখন তুমি তুমি হইলে। এতদিনে আমার পরিত্যাগ লজ্জাশল্য বিমোচন করিলে!” রাম বলিতেছেন, “তাহারই দ্বারা আমার বাষ্পদিপ্ত চক্ষুর বিনোদন করি।” শুনিয়া সীতা বলিলেন, “তুমি যার এত আদর কর, সেই ধন্য। তোমার যে বিনোদন করে সেই ধন্য। সে জীবলোকের আশানিবন্ধন হইয়াছে।”