পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ ᎼᏔ! निङ्कडि-बळ्नावलौ মালতীর মুখে গানটা বেশ লাগে—দু-তিনবার শুনলাম। আমার নয়নে কৃষ্ণ নয়নতার হৃদয়ে মোর রাধা-প্যারী আমার বুকের কোমল ছায়ায় লুকিয়ে খেলে বনবিহারী। গান শেষ হ’লে বললাম—শোন একটা কথা বলি মালতী, তুমি আস না কেন ? তোমাকে না দেখলে আমার বড় কষ্ট হয়। আজ সারাদিন বসেছিলুম ঘরের দাওয়াতে, এমন বর্ষা গেল —তুমি চৌষটিবার আমার ঘরের সামনে দিয়ে যাও, একবার তো এলে পারতে ? তোমার সে-সব নেই। শুধু কাজ আর কাজ। এই যে তোমাকে পেয়েছি, আর আমার যেন সব ভুল হয়ে গিয়েছে—সত্যি বলছি মালতী । মালতী মুখ নীচু ক'রে হাসি-হাসি মুখে চুপ ক’রে রইল । আমি বললাম—হাসলে চলবে না মালতী। কথার আমার উত্তর দাও। তুমি কি ভাবে আমি তোমাদের এখানে পড়ে আছি খেতে পাই নে বলে তাই ? তা নয় । —কে বলেছে আপনাকে যে না খেতে পেয়ে এখানে আছেন ? আমি আপনাকে বলেছি নাকি ? —যাক ওসব বাজে কথা । আমার কথার উত্তর দাও । মালতী আবার ছেলেমামুধি আরম্ভ করল। মুখ নীচু ক'রে হাটুর কাছে ঠেকিয়ে মৃদু মৃছ হাসিমুখে হাত দিয়ে শানের ওপর কি আঁকজোক কাটতে লাগল, কখনই ওর কাছে আমার কথার সোজা জবাব পেলাম না । এক দিন বেড়াতে গিয়ে বাধের ওপর বসে আমার অবস্থাটা ভেবে দেখলুম। আমি এমন জড়িয়ে পড়েছি যে নড়বার সাধ্য নেই এতটুকু। ও আমার সব কিছু ভুলিয়ে দিয়েছে— যে উদ্দেশ্বে এই দু-বছর পথে পথে ঘুরেছি সে উদেশ্ব এখন হয়ে পড়েছে গৌণ। এখন মালতীই সব, মালতীই আমার বিশ্বের কেন্দ্র, ও যখন আসে তখন জীবনে আর কিছু চাইবার থাকে না, ও যেদিন আসে, যেদিন হেসে কথা বলে—আমার মত সুখী লোক সেদিন জগতে আর কেউ থাকে না, মাঠের ওপর স্বৰ্য্যাস্ত সেদিন নতুন রঙে রঙীন হয়, বিচালি-বোঝাই গাড়িগুলো দ্বারবাসিনীর হাটের দিকে যায়, তাদের চাকার শব্দও ভাল লাগে, আখড়ার বাবাজীরা নিমগাছে উঠে নিমপাত পাড়ে—সে-ই যেন এক নতুন দৃপ্ত। মালতী যেদিন আসে না, কি ভাল ক'রে কথা বলে না, সারাদিন আমার মনে শান্তি থাকে না, ওরই কথা ভাবি সারক্ষিণ— কতক্ষণে দেখা হবে, কতক্ষণে কথা বলবো । মালতী আমায় এমন জালেও জড়িয়ে ফেলেছে ! হয়ত আমি এখান থেকে যেতাম না-হয়ত শেষ পর্য্যন্ত থেকেই যেতে হ’ত—কিন্তু যেদিন মালতী আমার কাছে বসে পুকুরঘাটে গান গাইলে তার পরদিনই দুপুরের পরে উদ্ধব-বাবাজী আমায় ডেকে বললে—একটা কথা বলি আপনাকে—কিছু মনে করবেন না। আপনার এখানে অনেক দিন হয়ে গেল, আমাদের আখড়ার নিয়ম অনুসারে তিন দিন মাত্র এখানে অতিথবোষ্টমের থাকবার কথা। আপনার প্রায় এগারো মাস হ’ল— আমি চুপ করে বসে রইলাম, কারণ ওর মুখ দেখেই আমার মনে হ’ল এটা কথার ভূমিকআসল কথাটা এখনও বলে নি। ঘটলও তাই। একটু ইতস্তত করে উদ্ধব বললে—তাতেও কিছু নী—কি জানেন, আপনার রুণির সঙ্গে এই মেলামেশাট ভাল দেখাচ্ছে না। আপনার কাছে বসে পুকুরঘাটে বিকেলে ও গান গেয়েছিল—একথা নিয়ে সবাই—বুঝলেন না, মেয়েমাছুষের নামে দুর্নাম রটতে দেরি লাগে না। আমি ওর অভিভাবক—এসব যাতে না হয়