পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›bኅy বিভূতি-রচনাবলী বাপু, কতটুকুই বা তোমরা বোঝ, আর কতটুকুই বা তোমরা জান । তোমাদের দেখে দয়া হয়। ভয়ে ভয়ে বললাম—আপনি জানলেন কি ক’রে ? সাধু হেসে বললেন—আরে পাগল, তুমিই তো জরের ঘোরে বলছিলে ঐ সব কথা—মইলে জানব কি ক’রে ? যাক, প্রাণে বেঁচে গিয়েছ এই ঢের । আর কখনও অমন পাগলামি করতে যেও না । আমি চুপ ক’রে রইলাম। তা হলে আমিই বিকারের ঘোরে সব ফাস ক'রে দিয়েছি!" সেইদিন মনে মনে সংকল্প করলাম দু-এক দিনের মধ্যেই এখান থেকে চলে যাব—শরীরটা একটু সুস্থ হয়ে উঠলেই । কিন্তু আমার ভাগ্যলিপি অন্ত রকম। সাধুবাবাজীকে তার পরদিন পাহাড়ী বিচ্ছুতে কামড়াল—তিনি তো যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে গেলেন । আমি পাচ মাইল দূরবর্তী মিহিজাম থেকে ডাক্তার ডেকে আনি, তার সেবা করি, দিনরাত জেগে তিন দিন পরে তাকে সারিয়ে তুলি । দিন-দশেক পরে আমি একদিন বললুম—সাধুজী আমি আজ চলে যেতে চাই । সাধু বিস্মিত হয়ে বললেন—চলে যাবে ? কোথায় ? —এখানে থেকেই বা কি হবে ? অামার তো কিছু হচ্ছে না—মিছে বসে থাকা আর মন্দিরের প্রসাদে ভাগ বসাসে । দুটি পেটের ভাতের লোভে আমি তো এখানে বসে নেই ? সাধুজী চুপ করে গেলেন, তখন কোন কথা বললেন না। সন্ধ্যার কিছু আগে আমায় ডেকে তিনি কাছে বসালেন । বললেন—ভেবেছিলাম এ-পথে নামাব না তোমায়। কিন্তু তুমি দুঃখিত হয়ে চলে যাচ্ছ, সেটা বড় কষ্টের বিষয় হবে আমার পক্ষে । তুমি আমার যথেষ্ট উপকার করেছ, নিজের ছেলের মত সেবা করেছ। তোমাকে কিছু দিতে চাই। একটা কথা তার আগে বলি, তোমার সাহস বেশ আছে তো ? বললুম—আঞ্জে হ্যা। এর আগেও আমি বীরভূমের এক শ্মশানে তন্ত্রসাধনা করেছি। তারপর আমি সেই শ্মশানের পাগলী ও তার অদ্ভুত ক্রিয়া-কলাপের কথা বললাম—এতদিন পরে আজ প্রথম সাধুকে পাগলীর কথা বললাম। 修 সাধু অবাক হয়ে বললেন—সে পাগলীকে তুমি চেন ? আরে, সে যে অতি সাংঘাতিক মেয়েমানুষ ! তুমি তার হাত থেকে যে অত সহজে উদ্ধার পেয়ে এসেছ সে কেবল তোমার পূৰ্ব্বজন্মের পুণ্য। ওর নাম মাতু পাগলী, মাতঙ্গিনী । ও নিম্নশ্রেণীর তন্ত্রে ভয়ানক ভাবে সিদ্ধ। ওর সংস্পশে গিয়ে পড়েছিলে! কি সৰ্ব্বনাশ ! ওকে আমরা পর্য্যন্ত ভয় করে চলি— কি রকম জান ? যেমন লোকে ক্ষ্যাপা শেয়াল-কুকুর কি গোখরো সাপকে ভয় করে, তেমনি । ও সেই জাতীয় । অসাধারণ ক্ষমতা ওর নিম্নতন্ত্রের। ওর ইতিহাস বড় অদ্ভুত, সে একদিন বলব ! কত দিন ওর সঙ্গে ছিলে ? —প্রায় দু-মাস । সাধুজী বললেন—যখন ওর সঙ্গে ছিলে, তখন কিছু কিছু অধিকার হয়েছে তোমার। তোমাকে আমি মন্ত্র দেব। কিন্তু তুমি যুবক, তোমার মনের ভাব আমি জানি। তুমি কি জন্তে রাত্রে পঞ্চমুণ্ডির আসনে গিয়েছিলে বল তো ? আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে রইলাম। মনের গোপন পাপ নেই, যদি পঞ্চমুক্তির আসনে বসে থাকি—তবে সেই অপরিচিত নিশাবিহারিণী রূপসীর টানে যে, এ-কথা গুরুস্থানীয় ব্যক্তির কাছে স্বীকার করব কেমন করে । সেই দিন সাধু অতি অদ্ভুত ও গোপনীয় কথা আমার বললেন।