পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१०br বিভূতি-রচনাবলী লোক ডাকিয়া আনিল—আরও ঘণ্টাখানেক টানাটানির পরে সকলে মিলিয়া বুধীকে টানিয়া তুলিল হাবড় হইতে “জল ! জল—সে একটু জল খাইবে । বৌটি বলিল—জাহা কি তেঃাটাই পেয়েছিল দেখলে ? টো টো করে এক গাড়, জল থেয়ে ফেলল—বুড়ো গরু ! দেথ না ওর পা কঁপিচে, দাড়াতে পারচে না । লোকটি খি চাইয়া বলিল—মরুক গে। ট্রেনটা ফেল হোল তো এখন ? কোথাকার এক ছেড়া ল্যাঠা জুটিয়ে দু'টি ঘণ্টা দিলে কাটিয়ে । চলে এখন—স্টেশন বসে থাকে রাত দশটা পর্য্যন্ত । নৌকা চলিয়া গেল। বুধ কি বলিয়া কৃতজ্ঞতা জানাইবে ? “ওগে অপরিচিত, জীবনের বড় শেষের দিকে তুমি এলে। তোমার মত মানুষের সঙ্গে যদি আগে দেখা হোত । যাও যেখানে যাবে। - গরুর আশীৰ্ব্বদে মামুষের কোন কাজ হয় কি না জানি ন!—শুভ হোক তোমার জীবনের যাত্রাপথ । তারপর আরও কয়েকদিন কাটিয়া গিয়াছে। একদিন বুধীর সারাদিন ভয়ানক কষ্ট গেল। সেদিন যেমন দারুণ বর্ষ, তেমনি ঝড় । তেমনি একটা বড় গাছও পাওয়া গেল না যাহার নীচে এই ভীষণ ঝড়বৃষ্টিতে সে আশ্রয় নেয়। একটা বঁাশ-ঝাড়ের তলায় আরও কয়েকটি গরুর সঙ্গে সন্ধ্য পৰ্য্যন্ত কাটাইয়া সেইখনেই ঘুমাইয়া পড়িল । সকাল হইতেই বুধীর ঘুম ভাঙিল। সারা গায়ে জোক লাগিয়া তাহার অৰ্দ্ধেক রক্ত চুষিয়া খাইয়াছে, এমন ভয়ানক জায়গা। ঝড়বৃষ্টি থামিয়াছে ; রৌদ্র উঠিল । হঠাৎ কিছু দূরে একটা পুকুর ও তার পাশের আমবাগান দেখিয়া তাহার মনে কেমন সন্দেহ হইল । জায়গাটা যেন পরিচিত মনে হইতেছে । - বুধী আগাইয়া গিয়া দেখিল। এই আমবাগান তো সে ইহার আগেও দেখিয়াছে ; যে দলটির সঙ্গে সে সেবার গিয়াছিল—এই আমবাগানে তাহার একদিন রাত্রি কাটায় ; পাশে পথটা— ওটাও সে চেনে । বুধী সেই পথ বাহিয়া আগ্রহের সহিত হাটিয়া চলিল—যতই যায় ততই তাহার বেশ মনে পড়িতে লাগিল, এই পথ তাহার পরিচিত। এ পথে সে আগে আসিয়াছে। এমন কি একদিন মনে হইল, তাহাদের গ্রাম আর বেশী দূরে নাই। ওই পথে সে পাউণ্ড-ঘর হইতে ফিরিয়াছে দু'তিন বার। সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে বুধীর মনে হইল তার হৃদস্পন্দন বুঝি বন্ধ হইয়া যাইবে । ওই তো তাহদের গ্রাম, তাহাদের গ্রামের সেই বড় অশ্বখ গাছটা, ওই তো সেই বেগুনের ক্ষেত-—ক্ষেতের পাশেই তাহদের নদী ; ওই তো গ্রামের ভাগাড়, ভাগাড়ের পাশে ভাঙা ইটখোলা । go o বুধী দৌড় দিল ; তখন আনন্দে সে প্রায় জ্ঞানশূন্ত । সন্ধ্যা হইবার দেরি নাই। বুধী দূর হইতে বাড়ি দেখিতে পাইল । গাবতলায় যে আনারসের জমি ছিল, বুধী আননে উৎসাহে আনারসের ক্ষেতের বেড়া ভাঙিয়া ছুটিতে ছুটিতে বাড়ির উঠানে গিয়া পৌছিতেই কোথা হইতে এক তীক্ষ মিষ্টি ক্ষুদ্র মেয়েলী কণ্ঠের আনন্দ ও বিস্ময় ভরা চীৎকার শোনা গেল—“ওম, ও ঠাকুরমা, শীগগির এসে স্থাখো কে এসেচে—শীগগির এসো—” পরক্ষণে বুধ তার গলায় দুটি নরম কচি হাতের সাগ্রহ নিবিড় বেষ্টন অনুভব করিল। খুকীর মা বাহিরে আসিয়া বলিলেন, কে এসেছে বলছিল খুকী ?-ওম, ও কে, বুধী না ?