পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«ხტ:é दिडूडि-द्रष्नांदलैौ বড় সুন্দর জ্যোৎস্না। বাংলার বাইরে ভিন্ন এ ধরণের ছায়াহীন অদ্ভুত ধরণের জ্যোৎস্না বড় একটা দেখা যায় না। বাদলবাবুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে কালাঝোর পাহাড়শ্রেণীর দিকে চেয়ে চোখ ফেরানো যায় না যেন—জ্যোৎস্নারাত্রে অস্পষ্ট দেখাচ্চে যদিও ; তবুও কি তার চেহারা! ই, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েচি। চা খেয়ে ওপারের বনে বেড়াতে যাওয়ার পূৰ্ব্বে গালুডির হাটে বেড়াতে গেলুম। ১৯৩৪ সালের গুডফ্রাইডের ছুটির পরে এই হাট আমি আর কখনো দেখিনি। সেই পুরানো দিনের মত টােমাটাে, শুটুকি মাছ, মহুয়ার তেল, বাজে লাড, আর তেলের খাবার বিক্রী করচে । সাওতাল মেয়ের গল্প করচে, পাচগ্রামের লোকের সঙ্গে আলাপ করচে। কাল ঠিক এই সময়ে কিন্তু রংপুরের সভাতে বসে আছি। পরদিন ভোর ছ’টাতে আমরা চারখানা গরুর গাড়ি করে দীঘাগড়া পাথর খাদানে রওনা হই। প্রথমে তে যাবার রাস্তা এর ভুল করলে। ফুলকাল ও বনকাটি দিয়ে না গিয়ে প্রায় চলে গেল ঘাটশিলার কাছাকাছি। কালাঝোর পাহাড়টা প্রায় সেখানে শেষ হয়েচে । বাদলবাবু কেবলই বলে, এখনো পথটা আসেনি, আরও আছে। এমনি করে অনেকটা গিয়ে তারপর বঁ-ধারে পথ পাওয়া গেল । বাপড়ি শোল বলে একটা সাওতালি গ্রামের প্রান্তে গাছতলায় সবাই শতরঞ্চি বিছিয়ে চা খেতে বসা গেল। মেয়েরা চা করতে লাগলেন । ভিক্টোরিয়া দত্ত খাবার দিলেন সবাইকে । বেলা ন’টা । সামনে কালাঝোর পাহাড়শ্রেণীর পাদদেশে ঘন বন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দূরের গ্রামের এক পল্লীবালিকা এতক্ষণ বকুলতলায় কি করচে মনে হল। চা খাওয়া শেষ করে একটা সাওতাল ছোকরার সঙ্গে দেখা । আমি তখন গরুর গাড়ি ছেড়ে একটু এগিয়ে চলেছি। সে বল্লে—দীঘার চেয়ে বাসাডেরার বন খুব বেশী । কিছু পয়সার লোভে সে আমাদের বাসাডেরা নিয়ে যেতে রাজী হল । নীরদবাবু কেবলই কালকার জ্যোৎস্নারাত্রির কথা বলছিলেন। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকেই তিনি আমার হাতে হাত দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নিলেন আর একদিন জ্যোৎস্নায় আমরা আবার এখানে আসব। বনের শোভা বড় সুন্দর। প্রথম বসন্তে শৈলসামুর বনে অজস্র গোলগোলি ফুলের গাছে ফুল ফুটেচে, পলাশ ফুটেচে, সাদা সাদা এক ধরণের ফুল, গাড়োয়ানেরা বললে, বুররা। লোহাজালির ফুলে বেশ সুগন্ধ—আর যেখানে সেখানে প্রস্ফুটিত শালমঞ্জরীর তো কথাই নেই—মুবাসে দুপুরের বাতাস মাতিরেচে। বনের মধ্যে একটু কুয়া এক জায়গায়, সাওতালের জল নেয়। আমরা সেই কুয়ার জল খেয়ে নিলাম। ডাইনে বেঁকে বনের মধ্যে বুরুডি গ্রাম। একটা পাথরের কারখানাতে পাথরের গেলাস, থালা, বাটি, খোরা তৈরী হচ্ছে, মেয়েরা নেমে কারখানা দেখতে গেলেন—আমরাও গেলুম সঙ্গে। বেলা সাড়ে দশটা। খুকু এতক্ষণ ওদের রান্নাঘরে মায়ের সঙ্গে রাধতে বসেচে। ক্রমশ: বন গভীর হয়ে এল। পথের ধারে বন্ত হস্তীর পদচিহ্ন গাড়োয়ানেরা দেখালে। গাইড়, ছোকরা বলে, বনে খুব মজুর আছে। মজুর ? মজুর কি ? একজন গাড়োয়ান বলে, বাবু, আপনারা যাকে ময়ুর বলেন। এ বনে যেখানে সেখানে পলাশ গাছ, লতার মত জড়িয়ে উঠেছে অন্ত বড় গাছের গায়ে—ফুল ফুটে রয়েচে । গোলগোলি গাছট এ বনে তত দেখচিনে। একস্থানে উচু ঘাট, অনেকটা শিলং-সিলেট রোডের মত, ডাইনে নীচু খাদ—গরুর গাড়ি খুব কষ্টে উঠতে লাগল। বাসাডের গ্রামের চারিধারেই পাহাড়, মধ্যে একটা উপত্যকার একটি সাওতালি বস্তি। গ্রামের লোকেরা আমাদের গাড়ির দিকে অবাক চোখে চেয়ে দেখচে । বালাভেরা গ্রাম পার হয়ে কি একটা বেগুনি রংয়ের বড় ফুলগাছ দেখলুম জঙ্গলে—খুব জঙ্গল এদিকটাতে। এখানে ঝাটি-ঝর্ণ বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে জঙ্গল আরও অনেক বেশী । ঘন জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে কত গ্রাম রয়েচে । পাহাড়ী ঝর্ণ তাদের জল যোগাবার একমাত্র স্থান। বাসাডের