পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯৬ : বিভূতি-রচনাবলী চেয়ে চেয়ে বহুদিন আগেকার বারাকপুরে যাপিত বাল্যদিনগুলির কথা—বিশেষতঃ পূজোর সময়কার কথা মনে পড়ে। বাবার এই সময়ে প্রতি বৎসর জর হত—ঘরে ধুনোর গন্ধ বেরুতে সন্ধ্যার সময়, বাবা জরের ঘোরে অস্ফুট কাতর শব্দ করতেন—আর আমরা ছেলেমাহুষ তখন, ভাবতুম—এবার পূজোর সময় আমাদের কাপড় হল না—(বালকবালিকার বড় স্বার্থপর হয় ) মায়ের হাতে একদম টাকা পয়সা থাকত না–১৯১৩ সালের পূজোর সময় বাবা কলকাতা না কোথায় ছিলেন, এক পয়সাও পাঠান নি, আমাদের সে কি কষ্ট, মা আমাকে তক্তপোশখানার কাছে দাড়িয়ে সন্ধ্যাবেলায় কি কথা বলেছিলেন সংসার ও বাবা সম্বন্ধে—সে-সব কথা মনে আসে কেবলই । স্বপ্রভার চিঠি আজও আসে নি, মন সেজন্যে ব্যস্ত আছে। এরকম তো কখনও হয় না ! খুকুর জন্তেও গত একমাস রোজই ভাবি—হয়তো পূজোর সময় দেখা হবে, নয়তে হবে নী—কত ভাবে এর কথা যে মনে হয় । বারবেলা ক্লাবে অভিননানের দিন গভীর রাত্রে জ্যোৎস্না-ভঙ্গ ছাদে ওর মুখখানি মনে হয়ে মন কি খারাপ হয়ে গিয়েছিল! তারপর মনে হয়েছিল সুপ্রভার কথা—কল্যাণীর কথা । - কি জানি কারও সঙ্গে দেখা হবে কি না। রেণু লিখেচে অবিপ্তি করে যাবার জন্তে এবার। দেখি কি হয় । yপূজো ফুরিয়ে গেল। ঘাটশিলাতে ছিলুম সপ্তমী পৰ্য্যস্ত। সেখানে গিয়েই সুপ্রভার হাতের একখানা রুমাল পেলুম। ক'দিন বেশ আনন্দ উপভোগ করা গেল ঘাটশিলায়। তুলসীবাবুর গাড়িতে সপ্তমীর দিন বৌমা, নীরদবাবু, রেখা, সুবর্ণ দেবী সবাই মিলে মৌভাগুর আরতি দেখতে যাওয়া গেল। বেশী শীত পড়েছিল, সেখানে বাধের পাশে শালবনে বেড়াতে যে তুম— কি চমৎকার লাগত। মহাষ্টমীর দিনে দুপুরের গাড়িতে আমি আর কমল কলকাতায় এলুম। গত পূজার কত কথা মনে হয় | জাহ্নবী নেই এ বছর। আর বছর কত প্রসাদ খাওয়া বনগায়ে, ভেবে কি কষ্ট হয় । খুকুর কথাও মনে হয়েছিল সপ্তমীর আরতির সময়—সেদিন দুপুরে গালুডিতে নীরদবাবুর বাড়ির বটতলায় পাথরে ঠেস্ দিয়ে বসে কেবল সুপ্রভ, স্বপ্রভা—ও, কি ভাবেই ওর কষ্ট মনে হয়েছিল সেদিন। সেই দুপুরের রোদে কালাজোর পাহাড়ের দিকে থেকে সুপ্রভা—খুকু—এদের কখন ভেবেচি । বনগারে এসে খুব আমোদ করা গেল। আর বছরের মত এবারও প্রফুল্লদের বাড়িতে সাৰ্ব্বজনীন পূজো দেখলুম। একদিন বারাকপুরে গেলুম কল্যাণী ও নব—ওদের নিয়ে। বনসিমতলার ঘাটে ওরা সবাই বনসিমের ফুল তুললে—গান করলে আমার বাড়ি বসে ন'দিদি, মেজখুড়ীমার সামনে। তারপর ওর হরিপদদার বাড়ি গেল। ফিরে এসেই সেদিন আবার বিজয়া সম্মেলন গেল প্রফুল্লর বাড়ি। আজ বনগী থেকে এলুম-রাত্রে চাটগা থেকে ময়মনসিং হয়ে । কতকাল ধরে পশ্চিমে যাই নি—বারো-তেরো বছর আগে। কেবলই যাচ্চি, অথচ পূব দিকে । খুকু আসে নি, যদিও আসবার কথা ছিল। এইমাত্র সকালের ট্রেনে চাটগা থেকে এলাম। ১৯৩৭ সালের পরে আর যাই নি। রত্না দেবীর স্বামী সমরবাবু ওখানে মুন্সেফ। রেণুর হয়তো শহরের বাড়িতে নেই ভেবে ওঁর ওখানে গিয়ে উঠলুম। প্রকাও সাততলা বাড়ি–অনেক দূর পর্য্যন্ত দেখা যায় সাতভলার ওপর থেকে --কর্ণফুলির দৃপ্ত অতি সুন্দর দেখায়। পরদিন সকালে ৱেণুদের বাড়ি গিয়ে দেখা করলুম।