পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)&e বিভূতি-রচনাবলী চরাতে গিয়ে পেড়ে আনতো—শুধু আত খেয়ে আমরা মাস-দুই কাটিয়েছি : আতার লোভেই এখানে থাকা । জিগ্যেস করুন না ওদের ? বড় মেয়েটি খাইতে থাইতে উজ্জ্বল মুখে বলিল—উঃ একটা জায়গা আছে, ওই পূবদিকের পাহাড়ের কোণের দিকে, কত যে বুনো আতা গাছ, ফল পেকে ফেটে কত মাটিতে পড়ে থাকে, কেউ খায় না। আমরা ঝুড়ি ঝুড়ি তুলে আনতাম । এমন সময় কে একজন ঘন-বনের দিক হইতে আসিয়া খুপড়ির সম্মুখে দাড়াইয়া বলিল— সীতারাম, সীতারাম,—জয় সীতারাম—একটু আগুন দিতে পার? গৃহকর্তা বলিল-আমুন—বাবাজী, বসুন। দেখিলাম, জটাজুটধারী একজন বৃদ্ধ সাধু। সাধু ইতিমধ্যে আমার দেখিতে পাইয়া একটু বিস্ময়ের ও বোধ হয় কথঞ্চিৎ ভয়ের সঙ্গে, সঙ্কুচিত হইয়া একপাশে দাড়াইয়া ছিল। আমি বলিলাম—প্রণাম, সাধু বাবাজী— সাধু আশীৰ্ব্বাদ করিল বটে, কিন্তু তখনও যেন তাহার ভয় যায় নাই। তাহাকে সাহস দিবার জন্য বলিলাম—কোথায় থাকা হয় বাবাজীর ? আমার কথার উত্তর দিল গৃহস্বামী। বলিল-বডড গজার জঙ্গলের মধ্যে উনি থাকেন, ওই দুই পাহাড় যেখানে মিশেছে, ওই কোণে। অনেক দিন আছেন এখানে । বৃদ্ধ সাধু ইতিমধ্যে বসিয়া পড়িয়াছে। আমি সাধুর দিকে চাহিয়া বলিলাম—কতদিন এখানে আছেন ? এবার সাধুর ভয় ভাণ্ডিয়াছে, বলিল—আজ পনের-ষোল বছর, বাবুসাহেব। — একা থাকা হয় তো ? বাঘ আছে শুনেছি এখানে, ভয় করে না ? --আর কে থাকবে বাবুসাহেব ? পরমাত্মার নাম নিই—ভয়ডর করলে চলবে কেন ? আমার বয়স কত বল তো বাবুসাহেব ? ভাল করিয়া লক্ষ্য করিয়া বলিলাম-সত্তর হবে । সাধু হাসিয়া বলিল—না বাবুসাহেব, নব্বইয়ের উপর হয়েছে। গয়ার কাছে এক জঙ্গলে ছিলাম দশ বছর। তার পর ইজারাদার জঙ্গলের গাছ কাটতে লাগল, ক্রমে সেখানে লোকের বাস হয়ে পড়ল। সেখান থেকে পালিয়ে এলাম। লোকালয়ে থাকতে পারি নে। —সাধু বাবাজী, এখানে একটা গুহা আছে, তুমি সেখানে থাক না কেন ? —একটা কেন বাবুসাহেব, কত গুহা আছে, এ-পাহাড়ে। আমি ওদিকে যেখানে থাকি সেটাও ঠিক গুহা না হলেও গুহার মত বটে। মানে তার মাথায় ছাদ ও দু-দিকে দেয়াল আছে—সামনেট কেবল খোলা । —কি থাও ? ভিক্ষণ কর ? —কোথাও বেরুই নে বাবুসাহেব। পরমাত্মা আহার জুটিয়ে দেন। বাশের কোড় সেদ্ধ খাই, বনে এক রকম কন্দ হয় তা ভারি মিষ্টি, লাল আলুর মত খেতে, তা খাই। পাকা আমলকী ও আতা এজঙ্গলে খুব পাওয়া যায়। আমলকী খুব থাই, রোজ আমলকী খেলে