পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8や。 বিভূতি-রচনাবলী পয়সা পৰ্য্যন্ত লইয়া বাজি ধরিয়া সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়াছে ! এখন উহাদের খাইবার পয়সা নাই, কিছু কেনা বা দেখাশোনা তো দূরের কথা । আমি তাহদের কাদিতে বারণ করিয়া তাহাদিগকে লইয়া জুয়াখেলার অকুস্থানের দিকে চলিলাম। প্রথমে তাহারা জায়গাই স্থির করিতে পারে না, পরে একটা হরীতকী গাছ দেখাইয়া বলিল—এরই তলায় খেলা হচ্ছিল। জনপ্রাণী নাই সেখানে। কাছারির রূপসিং জমাদারের ভাই সঙ্গে ছিল, সে বলিল-জুয়াচোরের কি এক জায়গার বেশীক্ষণ থাকে হুজুর ? লম্ব দিয়েছে কোন দিকে। বিকালের দিকে জুয়াড়ী ধরা পড়িল। সে মাইল তিন দূরে একটি বস্তিতে জুয়া খেলিতেছিল, আমার সিপাহীরা দেখিতে পাইয়া তাহাকে আমার নিকট হাজির করিল। ছেলেমেয়েগুলিও দেখিয়াই চিনিল। লোকটা প্রথমে পয়সা ফেরত দিতে চায় না। বলে, সে তো জোর করিয়া কাড়িয়া লয় নাই, উহার স্বেচ্ছায় খেলিয়া পয়সা হারিয়াছে, ইহাতে তাহার দোষ কি ? অবশেষে তাহাকে ছেলেমেয়েদের সব পয়সা তো ফেরত দিতেই হইল-আমি তাহাকে পুলিসে দিবার আদেশ দিলাম । সে হাতে পায়ে ধরিতে লাগিল । বলিলাম—তোমার বাড়ী কোথায় ? —বলিয়া জেলা, বাবুজী। —এ রকম করে লোককে ঠকাও কেন ? কত পয়সা ঠকিয়েছ লোকজনের ? —গরীব লোক, হুজুর! আমায় ছেড়ে দিন এবার। তিন দিনে মোটে দু-টাকা তিন আনা রোজগার— —তিন দিনে খুব বেশী রোজগার হয়েছে মজুরদের তুলনায়। —হুজুর, সারা বছরে এরকম রোজগার ক’বার হয় ? বছরে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা আয় । লোকটাকে সেদিন ছাড়িয়া দিয়াছিলাম—কিন্তু আমার মহাল ছাড়িয়া সেদিনই চলিয়া যাইবার কড়ারে। আর তাকে কোনদিন কেউ আমাদের মহালের সীমানার মধ্যে দেখেও নাই। এবার মর্থীকে কাটুনী মজুরদের মধ্যে না দেখিয়া উদ্বেগ ও বিস্ময় দুই-ই অনুভব করিলাম। সে বারবার বলিয়াছিল গম কাটিবার সময়ে নিশ্চয়ই আমাদের মহালে আসিবে। ফসল কাটার মেলা আসিল, চলিয়াও গেল—কেন যে সে আসিল না, কিছুই বুঝিলাম না। অন্যান্য মজুরদের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়াও কোন সন্ধান মিলিল না। মনে ভাবিলাম, এত বিস্তীর্ণ ফসলের মহাল কাছাকাছির মধ্যে আর কোথাও নাই, এক কুশীনদীর দক্ষিণে ইসমাইলপুরের দ্বিয়ারা মহাল ছাড়া। কিন্তু সেখানে কেন সে যাইবে, অত দুরে, যখন মজুরি উভয় স্থানেই একই। অবশেষে ফসলের মেলার শেষ দিকে জনৈক গাঙ্গোত মজুরের মুখে মন্ধীর সংবাদ পাওয়া