পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক }\జన থাক। অন্ধকারে কি শেষে ভীষণ বিষধর চন্দ্রবোড়া কিংবা শঙ্খচূড় সাপের হাতে প্রাণ দিব ? এ-সব স্থানে তাহদের অভাব নাই। যুগলপ্রসাদকে বলিলাম—এ জঙ্গলে কিছু গাছপালা লাগাও নূতন ধরনের। পাহাড়ের বন কেউ কখনো কাটবে না। লবটুলিয়া তো গেল—সরস্বতী কুণ্ডীর ভরসাও ছাড়— যুগলপ্রসাদ বলিল—ঠিক বলেছেন হুজুর। কথাটা মনে লেগেছে। কিন্তু আপনি ত আসছেন না, আমাকে একাই করতে হবে । —আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব। তুমি লাগাও। মহালিখারূপের পাহাড় একটা পাহাড় নয়, একটা নাতিদীর্ঘ, অমুচ্চ পাহাড়শ্রেণী, কোথাও দেড় হাজার ফুটের বেশী উচু নয়—হিমালয়েরই পাদশৈলের নিম্নতর শাখা, যদিও তরাই প্রদেশের জঙ্গল ও আসল হিমালয় এখান হইতে এক-শ হইতে দেড়-শ মাইল দূরে। মহলিখারূপের পাহাড়ের উপর দাড়াইয়া নিম্নের সমতল ভূমির দিকে চাহিয়া দেখিলে মনে হয় প্রাচীন যুগের মহাসমুদ্র এক সময়ে এই বালুকাময় উচ্চ তটভূমির গারে আছড়াইয়া পড়িত, গুহাবাসী মানব তখন ভবিষ্যতের গর্ভে নিদ্রিত এবং মহলিখারূপের পাহাড় তখন সেই মুপ্রাচীন মহাসাগরের বালুকাময় বেলাভূমি। 4 যুগলপ্রসাদ অন্তত আট-দশ রকমের নূতন গাছ-লতা দেখাইল—সমতল ভূমির বনে এগুলি নাই—পাহাড়ের উপরকার বনের প্রকৃতি অন্য ধরনের—গাছপালাও অনেক অন্য রকম। বেলা পড়িয় আসিতে লাগিল। কি রকমের বনফুলের গন্ধ খুব পাওয়া যাইতেছিল—বেলা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গন্ধটা যেন নিবিড়তর হইয়া উঠিল। গাছের ডালে ঘুঘু, পাহাড়ী বনটিয়া, হরটিট প্রভৃতি কত কি পক্ষীর কুজন! বাঘের ভয় বলিয়া সঙ্গীরা পাহাড় হইতে নামিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া পড়িল, নতুবা এই আসন্ন সন্ধ্যায় নিবিড় ছায়ায় নির্জন শৈলসান্থর বনভূমিতে যে শোভা ফুটিয়াছে, তাহ ফেলিয়া আসিতে ইচ্ছা করে না। মুনেশ্বর সিং বলিল—হুজুর, মোহনপুরা জঙ্গলের চেয়েও এখানে বাঘের ভয় বেশী। বিকেলের পর এখানে যারা কাঠকুটো কাটতে আসে সব নেমে যায়। আর দল না বেঁধে এক কেউ এ পাহাড়ে আসেও না । বাঘ আছে, শঙ্খচূড সাপ আছে—দেখছেন না কি গজাড় জঙ্গল সারা পাহাড়ে ! অগত্য আমরা নামিতে লাগিলাম। পাহাড়ের জঙ্গলে কেলিকদম্ব গাছের বড় পাতার আড়ালে শুক্র ও বৃহস্পতি জল জল করিতেছে।