পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శివty বিভূতি-রচনাবলী —মুচি। ময়না নাক সিটিকে বললে—ও, মুচিকে ছুতে গেলাম বই কি এই ভরসনো বেলা ? আমি পারবে না, আমি না বামুনের মেয়ে ? বলেই হাসতে হাসতে হাবুর সঙ্গে বেরিয়ে চলে গেল । দুজনে গিয়ে দেখলে মতি সেইভাবেই শুয়ে আছে, সেই একই দিকে ফিরে । ওর মাথার শিয়রে সেই কচুবাটা, পাশে একটা মাটির ভাড। ময়না গিয়ে ডাকলে, ও মতি— কোনো সাড়া-শব্দ নেই। ময়না হাবুর চেয়ে বয়সে বড়, বুদ্ধিমুদ্ধি তার আরও একটু পেকেচে, সে আরও কাছে এগিয়ে গিয়ে ভাল কবে দেখে বললে, কাকাবাবু বাড়ী থাকেন তো ডেকে নিয়ে আয় দিকি ! হাৰু বললে—কেন ? —আমার যেন কেমন কেমন মনে হচ্ছে হাবু, একজন কোনো বড লোককে ডেকে নিয়ে আয় দিকি ! এমন সময়ে দেখা গেল কীপালীদের ছোট-বেী সে পথে আসচে। ময়না বললে—ও মাসি, শোনো ইদিকে— —কি ? —এসে দেখে যাও, মতি-দিদি কথাবার্তা বলচে না, এমন করে শুয়ে আচে কেন ? ছোট-বোঁ তাড়াতাডি এগিয়ে এসে ভাল করে দেখলে। মতি মারা গিয়েচে । সে আর উঠে কচুবাটা খাবে না, ভীডেও আর থাবে না জল। তার জীবনের যা কিছু সঞ্চয়, তা পথের ধারেই ফেলে রেখে সে পরপারে চলে গিয়েচে । ছোট-বোঁ আর ময়নার মুখে সব শুনে অনঙ্গ-বেী হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। গ্রামে থাকা মুশকিল হয়ে পড়লে মতি মুচিনীর মৃত্যু হওয়ার পরে। অনাহারে মৃত্যু এই প্রথম, এর আগে কেউ জানত না বা বিশ্বাসও করে নি যে অনাহারে আবার মানুষ মরতে পারে। এত ফল থাকতে গাছে গাছে, নদীর জলে এত মাছ থাকতে, বিশেষ করে এত লোক যেখানে বাস করে গ্রামে ও পাশের গ্রামে, তখন মানুষ কখনো না খেয়ে মরে ? কেউ না কেউ খেতে দেবেই। না খেয়ে সত্যিই কেউ মরবে না। কিন্তু মতি মুচিনীর ব্যাপারে সকলেই বুঝলে না খেলে মানুষে তাহলে তো মরতে পারে এতদিন যা গল্পে-কাহিনীতে শোনা যেতো, আজ তা সম্ভবের গণ্ডির মধ্যে এসে পৌছে গেল । কই, এই যে একটা লোক মারা গেল না খেয়ে, কেউ তো তাকে খেতে দিলে না ? কেউ তো তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাচাতে পারলে না ? সকলের মনেই একটা বিষম আশঙ্কার স্বটি হোল। সবাই তো তা হোলে না খেয়ে মরতে পারে। দুর্গা ভট,চাব সেদিন দাওয়ার বসে মতি মুচিনীর মৃত্যুদৃগু দেখলে। মনে মনে ভাবলে