পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రీసిy বিভূতি-রচনাবলী ছোট ডোবাটা। চারি পাড়ে বড় বড় গাছের ছায়ায় ঝুপসি অন্ধকার হইয়া আছে। দুপুর বেলাতেও রোদ পড়ে না। এইটুকু তো ডোবা, এর আবার চারিদিকে চারিটা ঘাট। বাধান নয়, কাচা ঘাট। দক্ষিণ দিকের জামতলায় জেলে পাড়ার ঘাট, পশ্চিম পাড়ের বেলতলায় নাপিতদের ঘাট, পূবদিকে বামুন-পাড়ার ঘাট, উত্তর পাড়ে যাদের জমিতে ডোবাটা তাদের ঘাট । র্তারাও ব্রাহ্মণ, নিজেদের জন্যে একটা ঘাট আলাদা রাথিয়াছেন, কাহাকেও সে ঘাটে যাইতে দেন না । সেই বাড়ীরই মেয়ে সুবি,ভালোনাম মুবিনীতা—তাদেরঘাটে চায়ের পাত্ৰ ধুইতে নামিল। গ্রামের মধ্যে ওরা ওরই মধ্যে একটু শৌধীন, চা খাওয়ার অভ্যাস রাখে, সুবি কিছুদিন কলিকাতায় কাকার বাসায় থাকিয়া পড়িত। ক্লাস এইট, পৰ্য্যন্ত পড়িয়া পড়া ছাড়িয়া দিয়া আজ বছরখানেক বাড়ীতে বসিয়া আছে। গ্রামের মেয়েদের মধ্যে তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি খুবই বেশি, কারণ গ্রামের মধ্যে সে-ই একমাত্র মেয়ে, যে স্কুলের মুখ দেখিয়াছে—তাও আবার কলিকাতার। স্ববি দেখিতে মোটামুটি ভালোই, রং উজ্জল খাম, বড় বড় চোখ, একরাশ কোকড় কোকড়া চুল, সৰ্ব্বদা ফিটফট হইরা থাকে, একটু চালবাজ। ষোল বছর বয়েস, বিবাহের চেষ্টা চলিতেছে। রাধা মুবি বলিতে অজ্ঞান, কিন্তু মুবি তাকে বড় একটা আমল দেয় না। গরীব ঘরের মেয়ে, বাইশ তেইশ বছর বয়েস, তার ওপরে বিধবা এবং লেখাপড়াও তেমন কিছু জানে না–এ অবস্থায় রাধা কি করিয়া আশা করিতে পারে যে, সে কলিকাতার স্কুলের ক্লাস এইট, পৰ্য্যন্ত পড়া মেয়ে সুবির অন্তরঙ্গ মণ্ডলীতে স্থান পাইবে । তা সে পারে নাবা সে আশা করা তার উচিতও নয় । সুবিকে জলে নামিতে দেখিয়া রাধার মুখ ঠিক আগ্রহে ও আশায় উজ্জল দেখাইল । সে বলিল—ও স্ববি ভাই, তোদের চা খাওয়া হয়ে গেল ? সুবি কচুর ঝাড়ের গোড়া হইতে চায়ের পেয়ালা লইয়া জল বুলাইতে বুলাইতে বলিল—হয় নি। মার তো আজ সোমবার, মা খাবে না—শুধু আমি আর যাদু। তাড়াতাড়ি নেই, একবার গিয়ে জল চড়াব। সুবি নিজে থেকে কোনো কথা বড় একটা রাধার সঙ্গে বলে না—তবে রাধা যে কথা জিজ্ঞাসা করে, ভদ্রভাবে তার উত্তর দেয় । রাধা জানে সুবি সাংসারিক কথাবাৰ্ত্ত বলিতে ভালবাসে না । পড়াশুনা, গান, ফিল্ম, কবিতা প্রভৃতি তাহার কথাবাৰ্ত্তার বিষয়। কলিকাতায় থাকিয় তাহার রুচি বদলাইয়া গিয়াছে। রাধা তাহার মন যোগাইয়া চলিবার চেষ্টায় বলিল—কাল সন্ধ্যেবেলা তুই এলিনে ভাই, আমি কতক্ষণ বসে বসে একটা কবিতা মুখে মুখে বানালাম। তোকে শোনাব আজ দুপুরে। —কি কবিতা ? —আসিল, এখন না। শোনাব। মুখস্থ নেই, ভাই।