পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Web” বিভূতি-রচনাবলী সামনে তুলিয়া বলিল—আইয়ে জনাব, গরীবখানামে তস্রিফ লেতে আইয়ে— আমার মনের অস্বস্তি ঘুচিয়া গেল। রাজপুত জাতি অতিথি বলিয়া স্বীকার করিয়া তাহার অনিষ্ট করে না । কেহ আসিয়া অভ্যর্থনা না-করিলে ঘোড়া হইতে না-নামিয় ঘোড়ার মুখ ফিরাইয়া দিতাম কাছারির দিকে । উঠানে বহু লোক। ইহারা অধিকাংশই গাঙ্গেীত প্রজা। পরনের মলিন ছেড়া কাপড় আবীর ও রঙে ছোপানো, নিমন্ত্রণে বা বিনা-নিমন্ত্রণে মহাজনের বাড়ী হোলি খেলিতে আসিয়াছে । আধ-ঘণ্টা পরে রাসবিহারী সিং আসিল এবং আমায় দেখিয়ণ যেন অবাক হইয়া গেল । অর্থাৎ আমি যে তাহার বাড়ী নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইব, ইহা যেন সে স্বপ্নেও ভাবে নাই । যাহা হউক, রাসবিহারী আমার যথেষ্ট খাতির যত্ব করিল। পাশের যে-ঘরে আমার লইয়া গেল, সেটায় থাকিবার মধ্যে আছে খান-দুই-তিন সিসম কাঠের দেশী ছুতারের হাতে তৈরী খুব মোটা মোটা পায়া ও হাতলওয়ালা চেয়ার এবং একখানা কাঠের বেঞ্চি। দেওয়ালে সিদূর-চন্দন লিপ্ত একটি গণেশমূৰ্ত্তি। একটু পরে একটি বালক একখানা বড় থালা লইয়। আমার সামনে ধরিল। তাহাতে কিছু আবীর, কিছু ফুল, কয়েকটি টাকা, গোটকতক চিনির এলাচদান, মিছরিখণ্ড, এক ছড়া ফুলের মালা। রাসবিহারী সিং আমার কপালে কিছু আবীর মাথাইয়। দিল, আমিও তাহার কপালে আবীর দিলাম, ফুলের মালাগাছি তুলিয়া লইলাম। আর কি করিতে হইবে না-বুঝতে পারিয়া আনাড়ি ভাবে থালার দিকে চাহিয়া আছি দেখিয়া রাসবিহারী সিং বলিল—আপনার নজর, হুজুর। ও আপনাকে নিতে হবে। আমি পকেট হইতে আর কিছু টাকা বাহির করিয়া থালার টাকার সঙ্গে মিশাইয়া বলিলাম—সকলকে মিষ্টিমুখ করাও এই দিয়ে । রাসবিহারী সিং তার পর আমাকে তাহার ঐশ্বৰ্য্য দেখাইয়া লইয়া বেড়াইল । গোয়ালে প্রায় ষাট-পয়ষট্টিটি গরু। সাত আটটি ঘোড়া আস্তাবলে—দুটি ঘোড়া নাকি অতি মুন্দর নাচিতে পারে, একদিন নাচ অমায় সে দেখাইবে । হাতী নাই কিন্তু শীঘ্ৰ কিনিবার ইচ্ছা আছে। এ-দেশে হাতী না-থাকিলে সে সন্ত্রান্ত লোক হয় না। আট-শ মণ গম চাষে ৎউপন্ন হয়, দু-বেলার আশী-পঁচাশীজন লোক খায়, সে নিজে সকালে নাকি দেড় সের দুধ ও এক সের বিকানীর মিছরি স্বানান্তে জলযোগ করে। বাজারের সাধারণ মিছরি সে কখনও থায় না, বিকশনীর মিছরি ছাড়া । মিছরি খাইয়া জলযোগ যে করে, সে এ-দেশে বড়লোক বলিয়া গণ্য হয়—বড়লোকের উহা আর একটি লক্ষণ । তার পর রাসবিহারী একটা ঘরে আমায় লইয়া গেল, সে ঘরের আড়া হইতে দু-হাজার আড়াই-হাজার ছড়া ভুট্ট ঝুলিতেছে। এগুলি ভূটার বীজ, আগামী বৎসরের চাষের জন্ত রাথিয় দেওয়া হইয়াছে। একখানা লোহার কড়া আমায় দেখাইল, লোহার চাদর গুল বসানো পেরেক দিয়া জুড়িয়া কড়াখানা তৈরি, তাতে দেড় মৰ্ণ দুধ একসঙ্গে জাল দেওয়া হয় প্রত্যহ । তাহার সংসারে প্রত্যহই ঐ পরিমাণ দুধ খরচ হয় । একটা ছোট ঘরে লাঠি, ঢাল,