পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ᏬᏜ সড়কি, বর্শা, টাঙি, তলোয়ার এত আগুস্তি যে সেটাকে রীতিমত অস্ত্রাগার বলিলেও চলে । রাসবিহারী সিং-এর ছয়জন ছেলে—জ্যেষ্ঠ পুত্রটির বয়স ত্রিশের কম নয়। প্রথম চারিটি ছেলে বাপের মতই দীর্ঘকায়, জোয়ান, গোফ ও গালপাটার বহর এরই মধ্যে বেশ । তাহার ছেলেদের ও তাঁহার অস্ত্রাগার দেখিয়া মনে হইল, দরিদ্র, অনাহারশীর্ণ গাঙ্গেণত প্রজাগণ যে ইহাদের ভরে সঙ্কুচিত হইয়া থাকিবে ইহা আর বেশী কথা কি ! রাসবিহারী অত্যন্ত দাম্ভিক ও রাশভারী লোক । তাহার মানের জ্ঞানও বিলক্ষণ সজাগ। পান হইতে চুন খসিলেই রাসবিহারী সিং-এর মান যায়, সুতরাং তাহার সহিত ব্যবহার করিতে গেলে সৰ্ব্বদা সতর্ক ও সন্ত্রস্ত থাকিতে হয় । গাঙ্গোত প্রজাগণ তো সৰ্ব্বদা তটস্থ অবস্থায় আছে, কি জানি কখন মনিবের মানের ক্রটি ঘটে । বৰ্ব্বর প্রাচুৰ্য্য বলিতে যা বুঝায়, তাহার জাজ্বল্যমান চিত্র দেখিলাম রাসবিহারীর সংসারে । যথেষ্ট দুধ, যথেষ্ট গম, যথেষ্ট ভূটা, যথেষ্ট বিকানীৰ মিছরি, যথেষ্ট মান, যথেষ্ট লাঠিসোটা। কিন্তু কি উদ্দেশ্যে ? ঘরে একখানা ভাল ছবি নাই, ভাল বই নাই, ভাল কোঁচ-কেদার দূরের কথা, ভাল তাকিয়া-বালিস-সাজানো বিছানাও নাই। দেওয়ালে চুণের দাগ, পানের দাগ, বাড়ীর পিছনের নর্দমা অতি কদৰ্য্য নোংরা জল ও আবর্জনায় বোজানো, গৃহ-স্থাপত্য অতি কুন্ত্রী। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে না, নিজেদের পরিচ্ছদ ও জুতা অত্যন্ত মোট ও আধময়লা । গত বৎসর বসন্ত রোগে বাড়ীর তিন-চারটি ছেলেমেয়ে এক মাসের মধ্যে মারা গিয়াছে । এ বর্বর প্রাচুর্য্য তবে কোন কাজে লাগে ? নিরীহ গাঙ্গেত প্রজা ঠেঙাইয়া এ প্রাচুর্য্য অর্জন করার ফলে কাহার কি সুবিধা হইতেছে ? অবশ্য রাসবিহারী সিং-এর মান বাড়িতেছে। ভোজন্দ্রব্যের প্রাচুর্য্য দেখিয়া কিন্তু তাক লাগিল। এত কি একজনে থাইতে পারে। হাতীর কানের মত বৃহদাকার পুরী খান-পনের, খুরিতে নানা রকম তরকারি, দই, লাড", মালপো, চাটনি, পণপর । আমার তে এ চার বেলার খোরাক । রাসবিহারী সিং নাকি একা এর দ্বিগুণ আহাৰ্য্য উদরস্থ করিয়া শকে একবারে । আহার শেষ করিয়া যখন বাহিরে আসিলাম, তখন বেলা আর নাই । গাঙ্গেীতো প্রজার দল উঠানে পাতা পাতিয়া দই ও চীন ঘাসের ভাজা দানা মহা আনন্দে খাইতে বসিয়াছে। সকলের কাপড় লাল রঙের রঞ্জিত, সকলের মুখে হাসি । রাসবিহারীর ভাই গাঙ্গেীতাদের খাওয়ানোর তদারক করিয়া বেড়াইতেছে। ভোজনের উপকরণ অতি সামান্ত, তাতেই ওদের খুশী ধরে না। অনেক দিন পরে এখানে সেই বালক নৰ্ত্তক ধাতুরিয়ার নাচ দেখিলাম। ধাতুরিরা আর একটু বড় হইয়াছে, নাচেও আগের চেয়ে অনেক ভাল। হোলি উৎসবে এখানে নাচিবার জন্য তাছাকে বায়ন করিয়া আনা হইয়াছে। ধাতুরিয়াকে কাছে ডাকিয়া বলিলাম—চিনতে পার ধাতুরিয়া ? ধাতুরিয়া হাসিয়া সেলাম করিয়া বলিল—জী হুজুর। আপনি ম্যানেজারবাৰু! ভাল আছেন হুজুর ?