পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y QS বিরাজ-বেী শূন্ত পানের ডিবাট বিরাজের মাথা লক্ষ্য করিয়া সজোরে নিক্ষেপ করিল। বড় ডিবা তাহার কপালে লাগিয়া ঝন ঝন করিয়া খুলিয়া নিচে পড়িল । দেখিতে দেখিতে তাহার চোখের কোণ বাহিয়া ঠোঁটের প্রান্ত দিয়া রক্তে মুখ ভাসিয়া উঠিল। বিরাজ বা হাতে কপাল টিপিয়া চেচাইয়া উঠিল---আমাকে মায়ালে ? নীলাম্বরের ঠোঁট মুখ কঁাপিতে লাগিল, বলিল, না মারিনি; কিন্তু দূর হ সুমুখ থেকে-ও মুখ আর দেখাসা নে—অলক্ষ্মী দূর হয়ে যা ! বিরাজ উঠিয়া দাড়াইল, বলিল, যাচ্চি। এক পা গিয়া হঠাৎ ফিরিয়া দাড়াইয়া বলিল, কিন্তু সহ হ’বে তা ? কাল যখন মনে পড়বে, জরের উপর আমাকে মেরেচি-তাড়িয়ে দিয়েচ, আমি তিন দিন খাইনি তবু এই অন্ধকারে তোমার জন্যে ভিক্ষা ক’রে এনেচি-সইতে পারবে তা ? এই অলক্ষ্মীকে ছেড়ে থাকতে পারবে তা ? রক্ত দেখিয়া নীলাম্বরের নেশা ছুটয়া গিয়াছিল-সে মূঢ়ের মত চুপ করিয়া রহিল। বিরাজ আঁচল দিয়া মুছিয়া বলিল, এই এক বছর যাই যাই করচি, কিন্তু তোমাকে ছেড়ে যেতে পারিনি। চেয়ে দেখ, দেহে আমার কিছু নেই, চোখে ভাল দেখতে পাইনে, এক পা চলতে পারিনে-আমি যৌতুম না, কিন্তু স্বামী হয়ে যে অপবাদ আমাকে দিলে, আর আমি তোমায় মুখ দেখাব না। তোমার পায়ের নিচে মন্ত্রবার লোভ আমার সব চেয়ে বড় লোভ-সেই লোভটাই আমি কোন মতে ছাড়তে পারছিলুম। না—আজি ছাড়লম, বলিয়া কপাল মুছিতে মুছিতে খিড়কীর খোলা দোর দিয়া আর একবার অন্ধকার বাগানের মধ্যে মিলাইয়া গেল। নীলাম্বর কথা কহিতে চাহিল, কিন্তু জিভ নাড়িতে পারিল না। ছুটিয়া পিছনে যাইতে চাহিল, কিন্তু উঠিতে পারিল না।. কোন মায়া মন্ত্রে তাহাকে আচল পাথরে রূপান্তরিত করিয়া দিয়া বিরাজ অদৃশ্য হইয়া গেল।