পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

39 বিরাজ-বেী নীলাম্বর কি একটা বলিবার উপক্ৰম করিতেই বিরাজ বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল, না না, তোমার সঙ্গে তর্ক কম্ব না। কত বড় ঘেন্নায় যে আমি ইষ্টদেবতার নাম ক’রে দিব্যি করেচি, তোমাকে আর একটি কথাও বলতে যাব না, সে কথা তুমি শুনতে পেতে না, আজ যদি না, কথায় কথা উঠে পড়ত। এখন হয়ত তোমার মনে পড়বে না, কিন্তু ছেলেবেলায় একদিন আমি মাথার ব্যথায় ঘুমিয়ে পড়ি ; তোমাকে দোর খুলে দিতে দেরি হয়েছিল ব’লে মারতে উঠেছিলে, আমার অসুখের কথা বিশ্বাস কর নিন। সেই দিন থেকে দিব্যি করেছিলুম, অসুখের কথা আর জানাব না-আজ পৰ্য্যন্ত সে দিব্যি ভাঙিনি। নীলাম্বর মুখ তুলিতেই দুজনের চোখাচৌখি হইয়া গেল। সে সহসা উঠিয়া আসিয়া বিরাজের হাত দুইটি ধরিয়া ফেলিয়া উদ্বিগ্ন স্বরে বলিয়া উঠিল, সে হবে না বিরাজ, কখনও তোমার দেহ ভাল নেই। কি অসুখ হয়েচে বল-বলতেই হবে। বিরাজ ধীরে ধীরে হাত ছাড়াইবার চেষ্টা করিয়া বলিল, ছাড়, लांशgछ । লাগুক, বল কি হয়ে বিরাজ শুষ্কভাবে একটুখানি হাসিয়া বলিল, কই কিছুই তা হয় নি, বেশ আছি। নীলাম্বর অবিশ্বাস করিয়া বলিল, না, কিছুতেই তুমি বেশ নেই। না হ’লে কখনও তুমি সেই কত বৎসরের পুরনাে কথা তুলে আমার মনে কষ্ট দিতে না-বিশেষ যার জন্যে কতদিন, কত মাপা চেয়েছি। আচ্ছা, আর কোন দিন বলব না, বলিয়া বিরাজ নিজেকে মুক্ত করিয়া ঈষৎ সরিয়া বসিল । নীলাম্বর তাহার অর্থ বুঝিল ; কিন্তু আর কিছু বলিল না। তারপর মিনিট দুই-তিন চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া উঠিয়া গেল।