পাতা:বিলাপ - অমৃতলাল বসু.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

  দ্বিতীয় দৃশ্য।
কলিকাতা, নিমতলার ঘাট।
(একজন নাগরিকের প্রবেশ)|

১ম নাগ। হা কি দুর্দ্দৈব! কি পরিতাপ! বঙ্গভূমি আজ শূণ্য হ’ল, বঙ্গভাষা আজ পিতৃহীন হ’ল, বঙ্গবাসীর প্রতিদ্বন্দীহীন সমুজ্জ্বল প্রতিভাপূর্ণ গৌরবের ধন আজ করালে কালের যবনিকান্তরালে অন্তৰ্হিত হ’ল। র্যার বর্ণপরিচয় করে ধরিয়া মাতৃভাষার প্রথম সোপানে আরোহণ করিয়াছি, যাঁর ‘সীতার বনবাস’ ‘বেতালয পাঠে বুঝিয়াছি, যে বঙ্গভাষা অবজ্ঞার নহে, আদরের সামগ্রী, যিনি আবর্জ্জনাদি বর্জ্জন করিয়া দেবভাষা প্রসূত মাতৃভাষাকে সুললিত সুন্দর সাজে সাজাইয়া নবীন জীবন দান করিয়াছিলেন, তাঁহার চিতাধূম দৃষ্টি রোধ করিয়া গগনে উত্থিত হইতেছে, আজ তাই দেখিতেছি! ওহো চক্ষে দেখিতেছি, তবু যে একথা মন বিশ্বাস করিতে চায় না। একি সত্য! সত্য সত্যই কি বিদ্যাসাগর নাই! ঐ বহ্নিসংযুক্ত কাষ্ঠস্তূপ সত্যই কি সেই সরস্বতীর বরপুত্রের শব ভস্মে পরিণত করিতেছে। বিপদের বন্ধু আর কোথায় পাব! সংসার সমরের বিষম সমস্যায় কে আর আমাদিগকে সৎ পরামর্শ দান করিবে! সুমিষ্ট শাসনে সেই গুরুদেব বিনা কে আর আমাদিগের শতদোষ সংশোধন করিবে! রহস্যপূর্ণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৌতুক কথায় কে আর আমাদিগকে সৎশিক্ষা প্রদান করিবে! মানব দেহে অনাথনাথ হ’য়ে অনাথকে কে তার আশ্রয় দিবে! হা বিদ্যাসাগর! হা বিদ্যাসাগর।