পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিচ্ছবিরাজবংশ গ্রন্থে ‘বজি রাজ্য ৭৭০৭ট ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত এবং অধিপতিগণ স্বাধীন বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। বহিঃশত্রু উপস্থিত হইলে সকলে সম্মিলিত হইয়া এরূপ সিংহনাদ করিতেন যে, তাহাতে সমস্ত, উত্তরভারত স্তম্ভিত হইত। এ কারণে মগধের মহাবল পরাক্রান্ত সম্রাটগণও র্তাহাদের সহিত বিবাদ করিতে সাহসী হইতেন না । সম্মিলিত লিচ্ছবিরাজ্যের শাসনবিধিব্যবস্থাপনের জন্য বৈশালী নগরে একটী মহাসভা ছিল। সেই মহাসভা যাহা ব্যবস্থা করিতেন, তদনুবৰ্ত্তী হইয়াই সহস্ৰ সহস্ৰ ক্ষুদ্র লিচ্ছবিরাজ্য স্বশাসিত হইত। লিচ্ছবি-সমাজের ইতিহাস আলোচনা করিলে মনে চইবে তাহাদের কেহ জৈন, কেহ বৌদ্ধ, আবার কেহ কেহ পূৰ্ব্বপুরুষচরিত ব্ৰহ্মবাদী ছিলেন। মগধপতি বিম্বিসার বৈশালীর লিচ্ছবিরাজকুলে বিবাহ করিয়াছিলেন। বুদ্ধদেব মগধপতিকে সেচনক’ নামে এক প্রকাগু হস্তী এবং অষ্টাদশরত্নখচিত একছড়া হার প্রদান করেন। বিশ্বিসার সেই হস্তী ও হার প্রিয়তম কনিষ্ঠ পুত্র বেহল্লকে দিয়াছিলেন। তাহাতে র্তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র অজাতশত্রু পিতা ও কনিষ্ঠ ভ্রাতার প্রতি বড়ই অসন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। তাহারই ফলে বৃদ্ধনির্মাণের ৮ বর্য পূৰ্ব্বে পিতাকে বিনাশ করিয়া অজাতশত্র মগধ সিংহাসন কলঙ্কিত করেন । আয়ুরক্ষা করিবার জন্ত বেহল্ল বৈশালীতে গিয়া মাতামহকুলে আশ্ৰয় লইলেন। তখন জাতীয় একতাসূত্রে সম্মিলিত মাতামহকুলকে কি রূপে শাসন করিবেন, অজাতশত্র সেই ভাবনায় কাতর হইলেন। বৌদ্ধদিগের মহাপরিনিৰ্ব্বাণস্বত্রে লিখিত আছে—নিৰ্ব্বাণের অল্পকাল পূৰ্ব্বে বুদ্ধদেব যখন রাজগৃহের নিকটবৰ্ত্ত গৃধকূট পৰ্ব্বতে অবস্থান করিতেছিলেন, সেই সময় মগধরাজ অজাতশত্রু তাহার প্রধান ব্রাহ্মণমন্ত্রী বিশ্বাকরকে ডাকিয় জানাইলেন, ‘মন্ত্রিন ! আপনি ভগবানের নিকট গমন করুন, তাহাকে জানাইবেন যে, মগধরাজ প্রবল পরাক্রম. শালী লিচ্ছবিদিগকে সমূলে উৎপাটন করিবেন। ভগবান শুনিয়া কি বলেন, তাহ বিশেষ করিয়া মনে রাখিয়া জানাইবেন। তাহার কথা অন্যথা হইবার নহে।’ মন্ত্রিবর বুদ্ধ সমীপে আসিয়া অভিবাদনপূর্বক সমস্ত নিবেদন করিলেন। র্তাহাকে উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেই ভগবান আনন্দকে বলিলেন, “তুমি জান, বজ্জি (লিচ্ছবিগণ) সৰ্ব্বদা সাধারণ সভায় সমবেত হইয়া একতার সহিত সকল বিষয় মীমাংসা করেন। তাহার বয়োবৃন্ধের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখাইয়া থাকেন। র্তাহারা প্রাচীন প্রথাগুলি নষ্ট করিতে বিমুখ ও প্রাচীন প্রথা সন্মানের সহিত গ্রহণ করেন। নারীজাতির প্রতি র্তাহার কখন অত্যাচার করেন নাই। তাহারা চৈত্যের সন্মান ও পূজা XVII Գo [ २११ ] লিচ্ছবিরাজবংশ করিয়া থাকেন। বিশেষতঃ অৰ্হৎদিগকে যথেষ্ট সম্মান ও রক্ষা করিয়া থাকেন " আনন্দ উত্তর করিলেন, “ই ভগবান! আমি এ সমস্তই জানি।” বুদ্ধ তখন পুনরায় কহিলেন, “তাই কেহই তাহাদিগকে বিনাশ করিতে পারিবে না।” পরে তিনি রাজমীকে লক্ষ্য করিয়া উত্তর করিলেন, হে ব্রাহ্মণ! আমি বৈশালীনগরীস্থিত সারন্দদ চৈত্যে থাকিবার সময় লিচ্ছবিদিগকে যে সাতটা উপদেশ দিয়াছিলাম, যতদিন তাহার সেই সকল উপদেশ যত্নের সহিত পালন করিবে, তত দিন কেহই তাহাদিগকে ধ্বংস করিতে পারিবে না, তত দিন তাহাদের উত্তরোত্তর শ্ৰীবৃদ্ধি হইবে।” রাজমন্ত্রী ফিরিয়া আসিয়া মগধপতিকে বুদ্ধবাক্য জানাইল। মগধপতি আপাতঃ বিবাদে ক্ষান্ত হইলেন। উক্ত ঘটনার কিছু দিন পরে বুদ্ধদেব বৈশালী যাত্র করেন। তিনি গঙ্গাতীরস্থ পাটলী গ্রামে আসিয়া দেখিলেন যে, লিচ্ছবিদিগকে উৎপীড়ন করিবার অভিপ্রায়ে বিশ্বাকর ও সিন্ধু নামক মগধরাজের প্রধান মন্ত্রিদ্বয় এক টুর্গ নিৰ্ম্মাণ করাইতেছেন। বুদ্ধদেব বৈশালীতে আসিয়া আম্রপালীর উদ্যানে কিছুকাল অবস্থান করিলেন। লিচ্ছবিগণ দলে দলে আসিয়া তাহাকে দর্শন করিয়া কৃতাৰ্থ হইল। তাহাদিগের সমক্ষেই বুদ্ধদেব প্রকাশ করেন যে, আর তিন মাস অস্তে তিনি কুশীনগরে মুহানিৰ্ব্বাণ লাভ করিবেন। তৎপরে বুদ্ধ বৈশালী পরিত্যাগ করিয়া কুশানগরাভিমুখে অগ্রসর হইলেন। লিচ্ছবি ক্ষত্ৰিয়গণ তাহাদের প্রাণ অপেক্ষ প্রিয়তম বুদ্ধকে চিরদিনের জন্ত কেমন করিয়া বিদায় দিবেন ? তাহারা উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে কঁদিতে সকলেই বুদ্ধের অনুগমন করিতে লাগিলেন। বুদ্ধদেব তাহাদিগকে ফিরিয়া যাইতে বলিলেন, কিন্তু তথ্যগতের এ নিদারুণ আদেশ তাঙ্গর রক্ষা করিতে পরিলেন না । এ দেহ ক্ষণস্থায়ী, সকলকেই মরিতে হইবে এইরূপ বুঝাইয়া বুদ্ধ আবার ফিরিতে কহিলেন। কিন্তু ভক্ত লিচ্ছবিগণ কিছুতে নিবৃত্ত হইলেন না। সম্মুখে এক গভীর নদী আসিয়া পড়িল। তথন নদী অতিক্রম করিতে অসমর্থ হইয়া লিচ্ছবিগণ আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিলেন। বুদ্ধদেব মধুর বাক্যে র্তাহাদিগকে সাম্বন করিয়া তাহার জীবনের একমাত্র সম্বল ভিক্ষাপাত্ৰ দিয়া চলিলেন । সেই ভিক্ষাপাত্র লইয়া লিচ্ছবিগণ বৈশালীতে ফিরিয়া আসিলেন এবং এক প্রকাগু মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়া তন্মধ্যে সেই পবিত্র ভিক্ষাপাত্র রক্ষা করিলেন । বুদ্ধদেবের পরিনিৰ্ব্বাণের পর তাহার দেহাবশেষ লইয়াতুমুলযুদ্ধ বাধিবার স্বত্রপাত হইয়াছিল। এ সময় কুশীনগর পাবার মল্পক্ষত্রিয়রাজগণের অধিকারভুক্ত। তাহারা