পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গদেশ (ভূতত্ত্ব)
[৩৯৫]
বঙ্গদেশ (ভূতত্ত্ব)

সংলগ্ন হইয়াছে, সে সকল পর্ব্বত হইতে এই বালিয়াড়ীনির্ম্মিত পর্ব্বতমালার প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। সে সকল পর্ব্বতমালা বহুযুগ পূর্ব্বে সৃষ্ট হইয়াছে। সমুদ্র এক সময়ে তাহারই পাদদেশ ধৌত করিয়া প্রবাহিত ছিল। কালে তথা হইতে সরিয়া গিয়া এই তৃতীয় বিভাগস্থ ভূমি সকল উদ্ভূত করিয়াছে। এ ভূভাগ প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ হইতে আধুনিক। কিন্তু আধুনিক হইলেও, দ্বিতীয় বিভাগ হইতে বহুপরিমাণে দৃঢ়তাপ্রাপ্ত হইয়াছে। কিন্তু সে দৃঢ়তা প্রথম বিভাগের সমকক্ষ নহে।

 চতুর্থ বিভাগ।–এই বিভাগের মৃত্তিকা সর্ব্বত্র পল্বলময়, কোন কোন স্থানে কারণ বিশেষে কিছু দৃঢ়তা প্রাপ্ত হইয়াছে মাত্র। প্রথম ও চতুর্থ বিভাগের মৃত্তিকা পরস্পরে তুলনা করিলে স্পষ্টই পৃথক্ ধর্ম্মাক্রান্ত বলিয়া বোধ হয়। গঙ্গার দক্ষিণে রাজমহলের পার এবং উত্তরে মালদহের পার, এ দুইয়ের মাটি তুলনা করিলে অতি সুন্দরভাবে পার্থক্য দেখিতে পাওয়া যায়। রাজমহলের পারে গঙ্গার জলের ধার পর্য্যন্ত পাথর ও কাঁকরযুক্ত কঠিন রাস্তা ও এঁটেল মাটি এবং ঠিক তাহার ওপারের সমস্ত জমি, অথবা সমস্ত মালদহ জেলার দোআঁস পলিযুক্ত মাটি বা কেবল রাজমহল ও মালদহের পার বলি কেন, সমস্ত ভাগীরথীর ব্যাপ্ত দুই পারের মাটির তুলনা করিলে, তদুভয়ের প্রকৃতিগত ভেদ সামান্য দৃষ্টিতেও পরিলক্ষিত হয়। ভাগীরথীর পশ্চিম পারের নিতান্ত ধারের মাটি লইয়া তুলনা করিলে বিশেষ কিছুই প্রভেদ দেখা যায় না। যে পর্য্যন্ত নদীর ক্রিয়ায় মাটির ভাঙ্গা গড়া হইতেছে বা পূর্ব্বকালে হইয়া গিয়াছে, তাহার সীমা অতিক্রম করিয়া মাটি পরীক্ষা করা আবশ্যক।

 পশ্চিমে ভাগীরথী, উত্তরে পদ্মা ও তাহার শাখা প্রশাখা, পূর্ব্বে ধলেশ্বরী ও মেঘনা এবং দক্ষিণে সমুদ্র বিস্তৃত এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ ভূভাগই চতুর্থ বিভাগের আয়তন। গঙ্গা এবং তাহার অসংখ্য শাখা নদীসমূহের প্রবাহ দ্বারা আনীত মৃত্তিকায় সমুদ্র ভরাট হইয়া ক্রমে ক্রমে চর পড়িয়া বদ্বীপের সমস্ত ভূমিভাগই নির্ম্মিত হইয়াছে। এজন্য প্রায় সমস্ত ভূভাগেই পলি মাটি সকল অতি অবিকৃতভাবে বর্ত্তমান দেখা যায়। ফলতঃ এই পলি মাটির গুণে এই ভূভাগের প্রায় সমস্ত জমির উর্ব্বরতা-শক্তিও এত অধিক যে, তাহার সঙ্গে অপর কোন বিভাগের মৃত্তিকার তুলনাই হইতে পারে না। এখানে বৎসরের মধ্যে একই জমিতে বহুবার ফসল হইয়া থাকে এবং জমি পতিত থাকিলেও যত শীঘ্র জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়, এত আর কোথাও হয় না।

 পূর্ব্ব কথিত ভূমিসমূহের মধ্যে প্রথম বিভাগীয় জমি সর্ব্বাপেক্ষা নীরস; বহুদিন পতিত থাকিলেও, চতুর্থ বিভাগের
জমির ন্যায়, কোন কালেই ঘন জঙ্গলপূর্ণ অবস্থা প্রাপ্ত হয় না; অথবা তথায় উদ্ভিদাদির বৃদ্ধি এবং বিকাশও তাদৃশ সতেজ বা শীঘ্রতর নহে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগীয় জমির উর্ব্বরতা গুণ প্রায়ই এক সমান এবং প্রথম বিভাগীয় জমি অপেক্ষা বহুগুণে সতেজ। এমন কি কোন কোন অংশ চতুর্থবিভাগের অনেকটা অনুরূপ।

 চতুর্থ বিভাগের মাটি এবং তৃতীয় বিভাগের মাটি যদিও উভয়ই ক্রমে সমুদ্র সরিয়া যাওয়ায় জাগিয়া উঠিয়াছে বটে; কিন্তু ইহাদের নির্ম্মাণ-প্রকরণে প্রকৃতিগত বিভিন্নতা অনেক। এই প্রকার মাটি নির্ম্মাণে সমুদ্রের নিত্য জোয়ার ভাটার সময় জল সরিয়া যাওয়ার সঙ্গে কতকটা সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। ভাটার সময় সমুদ্রের ঢালু তীর ভূমিতে যে প্রকার স্তবকে স্তবকে দাগ রাখিয়া জল নীচে গিয়া সরিয়া পড়ে; এখানেও সেইরূপ কোন নৈসর্গিক কারণবশে কালক্রমে যেমন সমুদ্র জল স্তবকে স্তবকে সরিয়া গিয়া পৃথক্ হইয়া পড়িয়াছে, ঠিক সেই প্রকারেই এই সকল জমির উদয় হইয়াছে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে আবার বায়ুর প্রবল আঘাতে বালুকারাশি স্তূপীকৃত হইয়া ও তথাবিধ কারণে ক্রমোত্তর পুষ্টিলাভ করিয়া, প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বালিয়াড়ী সকল নির্ম্মাণ করিয়াছে। কিন্তু চতুর্থ বিভাগীয় মৃত্তিকা-প্রকার নির্ম্মাণ করিবার প্রকরণ অন্যবিধ।

 বাঙ্গালার দক্ষিণস্থ চব্বিশ পরগণা, খুলনা ও বরিশাল জেলার দক্ষিণভাগ এবং সুন্দরবনের অবস্থা মনোযোগপূর্বক পরিদর্শন করিলে এই চতুর্থ প্রকার ভূমিনির্ম্মাণের কৌশল অতি সহজেই অনুভব করিতে পারা যায়। নদীপ্রবাহে আনীত মৃত্তিকার ক্রিয়াদ্বারা নদীর সঙ্গম-স্থলস্থ সমুদ্রে চর পড়ে বটে, কিন্তু তাহা একেবারে খানিকটা পরিমাণ স্থান চারিদিকে সমানভাবে ভরাট করিয়া জমাট বাঁধে না বা একবারে সেইভাবে উঁচু হইয়া উঠে না।

 নদীপ্রবাহ সন্তাড়িত ঐরূপ মৃত্তিকারাশি সমুদ্রগর্ভে বিক্ষিপ্ত হইয়া প্রথমে লম্বা ত্রিকোণ ক্ষেত্রের আকারে মোহনাস্থিত সমুদ্রকে ভরাট করিবার চেষ্টা করে এবং ঐ ত্রিকোণক্ষেত্রের তলদেশ নদীর মুখে এবং অগ্রবর্ত্তী কোণ সমুদ্রের দিকে থাকে। কিন্তু সমুদ্রের প্রবল স্রোতাবেগ, অতি অল্প পরিসরযুক্ত স্থানসমূহকে কাটিয়া বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয়, এই হেতু যখন ভরাট স্থান ক্রমে সমুদ্র ছাড়িয়া উঠে, তখন এক অবিচ্ছিন্ন ত্রিকোণ-ভূখণ্ড নির্ম্মিত হওয়ার পরিবর্ত্তে কতক অংশ মূল ভূভাগে সংলগ্ন এবং অবশিষ্ট বহুখণ্ড দ্বীপাকারে পরিণত হইয়াছে দেখিতে পাওয়া যায়। সেই দ্বীপগুলির মধ্যে যেটি সকলের মধ্যস্থলে অবস্থিত, সেটী অল্পবিস্তর লম্বা আকার