বাণিজ্যকেন্দ্র বলিয়া পরিগণিত। তন্মধ্যে যে গুলি বিশেষ সমৃদ্ধ ও ধনজনপূর্ণ, নিম্নে তাহাদের নাম উল্লেখ করা গেল—
নগরের নাম | লোকসংখ্যা | |||
কলিকাতা সহরতলী, ভবানীপুর কালীঘাট একত্র | ৮ | লক্ষ | ||
পাটনা | ১ | লক্ষ | ৭১ | হাজার |
হাবড়া | ১ | „ | ৫ | „ |
ঢাকা | ৮০ | „ | ||
গয়া | ৭৭ | „ | ||
ভাগলপুর | ৬৯ | „ | ||
দরভাঙ্গা | ৬৬ | „ | ||
মুঙ্গের | ৫৬ | „ | ||
ছাপরা | ৫২ | „ | ||
বেহার | ৪৯ | „ | ||
আরা | ৪৩ | „ | ||
কটক | ৪৩ | „ | ||
মুজঃফরপুর | ৪২॥ | „ | ||
মুর্শিদাবাদ | ৩৯॥ | „ | ||
দানাপুর | ৩৮ | „ | ||
বৰ্দ্ধমান | ৩৪ | „ | ||
মেদিনীপুর | ৩৩॥ | „ | ||
হুগলী ও চুঁচুড়া | ৩১ | „ | ||
আগরপাড়া | ৩০॥ | „ | ||
বরাহনগর | ৩০ | „ | ||
শান্তিপুর | ২৯॥ | „ | ||
কৃষ্ণনগর | ২৭॥ | „ | ||
শ্রীরামপুর | ২৫॥ | „ | ||
হাজীপুর | ২৫ | „ | ||
বহরমপুর | ২৩॥ | „ | ||
পুরী | ২২ | „ | ||
নৈহাটী | ২১॥ | „ | ||
বেতিয়া | ২১ | „ | ||
সিরাজগঞ্জ | ২১ | „ | ||
চট্টগ্রাম | ২১ | „ | ||
বালেশ্বর | ২০ | „ |
বিগত ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে রাজকীয় নিয়মানুসারে বঙ্গরাজ্যকে দ্বিখণ্ড করিয়া উহার কতকাংশ লইয়া আসাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। এই মিলিত প্রদেশ এক্ষণে ‘পূর্ব্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’ বলিয়া পরিচিত। প্রাচীন বাঙ্গালা হইতে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, রঙ্গপুর, দিনাজপুর, ফরিদপুর ও রাজশাহী জেলা বিচ্ছিন্ন করিয়া এই বিভাগে সংযুক্ত করা হইয়াছে। পক্ষান্তরে সীমা-সামঞ্জস্য রক্ষা হেতু মধ্যপ্রদেশ হইতে সম্বলপুর বিভাগ বাঙ্গালা প্রেসিডেন্সীভুক্ত করা হইয়াছে।
বাঙ্গালার জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি হইবে। এই ৭ কোটির মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ লোক বেকার। এই কারণেই যে দেশের দারিদ্র্য উত্তরোত্তর পরিবর্দ্ধিত হইতেছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। ঐ ৪॥০ কোর্টি লোকের মধ্যে শিশু বালিকা ও রমণীগণ গৃহীত। তন্মধ্যে ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার লোক গৃহকর্ম্মাদি ব্যতীত অপর কোন কার্য্যই করে না। অবশিষ্ট ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার স্ত্রীলোকের মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ কৃষিকার্য্যের সহযোগিতা করে এবং তদবশিষ্ট কলকারখানায় ও গৃহস্থের বাটীতে কার্য্যে লিপ্ত থাকে। কতকগুলি বা বাঁশের কাজে, ডাকের গহনা ও জরি প্রভৃতি প্রস্তুত কার্য্যে বা তদনুরূপ সামান্য শিল্পকার্য্যে নিযুক্ত রহিয়াছে। ৩ কোটি ৪৭ লক্ষ পুরুষের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫৮ লক্ষ ৩৫ হাজার লোক বেকার। ইহাদেরহিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী জাতি লইয়া বাঙ্গালার এই অধিবাসিসংখ্যা গঠিত। প্রকৃত বঙ্গবাসীর মধ্যে সামাজিক মর্য্যাদানুসারে যে যে শ্রেণীগত বিভাগ হইয়াছে, নিম্নে তাহদের নাম বা সামাজিকসংজ্ঞা লিখিত হইল:—
হিন্দু—ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ক্ষত্রিয় বা রাজপুত, বৈদ্য, বাভন, বেণিয়া, গোয়ালা, আহীর, সদ্গোপ, কৈবর্ত্ত, জেলে, তিওর, পোদ, তেলী, কলু, শুঁড়ী, কুমার, কামার, গোঁড়, তাম্বূলী, কোএরী, কুর্ম্মী ইত্যাদি এবং অনার্য্য—সাঁওতাল, কোল, ওরাওন, মুণ্ডা, ভুঁইয়া, ভূমিজ, খরবার, কোচ ইত্যাদি। অৰ্দ্ধহিন্দু—চণ্ডাল, কোচ, পলী, রাজবংশ, বাগ্দী, বাওরী, চামার, মুচী, দোসাধ, মুসাহর, পাসী প্রভৃতি।[১] এই সকল ও বঙ্গবাসী অন্যান্য জাতির বিবরণ অন্যত্র প্রদত্ত হইয়াছে। [তত্তৎ শব্দ দেখ।]
পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে যে, কৃষিকার্য্যই এখানকার অধিবাসিবর্গের প্রধান উপজীবিকা। উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান্য ও পাট প্রধান, তদ্ভিন্ন এখানকার কৃষকগণ আবশ্যক মত তৈলকর বীজ, ছোলা, কলাই প্রভৃতি নানা শস্যের চাস করিয়া থাকে। আমন, আউস, বোরো এবং উরী বা জাড়া (জলা) ধান বিভিন্ন সময়ে উৎপন্ন হয়। সরিষা, তিসি ও কলাই প্রভৃতি রবি শস্য সময়ান্তরে উৎপন্ন হইতে দেখা যায়। পাট বা কোষ্টার চাস এখন উত্তরোত্তর বাড়িতেছে, কিন্তু নীলের চাস উঠিয়া যাইতেছে। পূর্ব্ববঙ্গের নীলকুটীমাত্রই এখন পতিতাবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। পশ্চিম বঙ্গের কএকটী স্থানে মাত্র নীল পচান হইতেছে। হিমালয়পাদমূলস্থ দাৰ্জ্জিলিঙ্গ জেলাসমূহে চা ও সিন্কোনা এবং ভাগলপুর ও বেহার অঞ্চলের নানাস্থানে অহিফেনের চাস আছে।
বর্ত্তমান অবস্থা।
অবস্থার পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবাসী বাঙ্গালী জাতির অদৃষ্টও ক্রমশঃ মন্দ হইয়া পড়িতেছে। যে বাঙ্গালীর বীরত্বকাহিনী চিরন্তন কাল হইতে ইতিহাসের উজ্জ্বল চিত্রপটে প্রতিফলিত রহিয়াছে, সেই বাঙ্গালী আজি অন্নদায়ে লালায়িত। মহাভারতীয় যুগেও বঙ্গীয় বীরগণের প্রভাব দিগন্তে রাষ্ট্র হইয়াছিল। স্বাধীন বাঙ্গালী রাজগণ দোর্দ্দণ্ড প্রতাপে রাজ্যশাসন করিয়া গিয়াছেন। শূরবংশ, পালবংশ ও সেনবংশীয়