পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রদ্ধা প্রভূত ত্যাগস্বীকারে অকুণ্ঠিত, সেই অকৃত্রিম শ্রদ্ধাই ছিল স্বদেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যথার্থ প্রাণউৎস।

 এ কথা সহজেই কল্পনা করা যায় যে, জ্ঞানসাধনার এই সকল বিরাট যজ্ঞভূমিতে মানুষের মনের সঙ্গে মনের কীরকম অতি বৃহৎ ও নিবিড় সংঘর্ষ চলেছিল, তাতে ধীশক্তির বহ্নিশিখা কীরকম নিরন্তর প্রোজ্জ্বল হয়ে থাকত। ছাপানো টেক্‌স্‌ট্‌ বুক্‌ থেকে নোট দেওয়া নয়, অন্তর থেকে অন্তরে অবিশ্রাম উদ্যম সঞ্চার করা। বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, জ্ঞানে দেশের যাঁরা সুধীশ্রেষ্ঠ, দূর দূরান্তর থেকে এখানে তাঁরা সম্মিলিত। ছাত্রেরাও তীক্ষ্ণবুদ্ধি, শ্রদ্ধাবান, সুযোগ্য; দ্বারপণ্ডিতের কাছে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে তবে তারা পেয়েচে প্রবেশের অধিকার। হিউয়েন সাঙ লিখেছেন এই পরীক্ষায় দশ জনের মধ্যে অন্তত সাত আট জন বর্জ্জিত হোত। অর্থাৎ তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশনের যে ছাঁকনি ছিল তাতে মোটা মোটা ফাঁক ছিল না। তার কারণ, সমস্ত পৃথিবীর হয়ে আদর্শকে বিশুদ্ধ ও উন্নত রাখবার দায়িত্ব ছিল জাগরূক। লোকের মনে উদ্বেগ ছিল পাছে অযথা প্রশ্রয়ের দ্বারা বিদ্যার অধঃপতনে দেশের পক্ষে মানসিক আত্মঘাত ঘটে। নানা প্রকৃতির মন এখানে একজায়গায় সমবেত হোত, তারা একজাতীয় নয়, একদেশীয় নয়। এক লক্ষ্য দৃঢ় রেখে এক জীবিকা-ব্যবস্থায় তারা