পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ বিষবৃক্ষ ডাক্তার বলিলেন, “ঔষধ আছে বই কি। উহাকে খুব গরমে রাখি আর এই কাষ্টর-অয়েলুটুকু লইয়া যা, কাল প্রাতে খাওয়াইস। পরে অন্ত ঔষধ দিব।” ডাক্তার বাবুর বিদ্যাটা ঐ রকম। বুড়ী কাষ্টর-অয়েলের শিশি হাতে, লাঠি ঠক্ ঠক্‌ করিয়া চলিল। পথে এক জন প্রতিবাসিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। সে জিজ্ঞাসা করিল, “কি গো হীরের আয়ি, তোমার হাতে ও কি ?” হীরার আয়ি কহিল যে, “হীরের ইষ্টিরস হয়েছে, তাই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, সে একটু কেষ্টরস দিয়াছে। ত৷ ই গা কেষ্টরসে কি ইষ্টিরস ভাল হয় ?” প্রতিবাসিনী অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, “তা হবেও বা । কেষ্টই ত সকলের ইষ্টি। ত র্তার অনুগ্রহে ইষ্টিরস ভাল হইতে পারে। আচ্ছা, হীরার আয়ি, তোর নাতিনীর এত রস হয়েছে কোথা থেকে " হীরার আয়ি অনেক ভাবিয়া বলিল, “বয়সদোষে অমন হয় ।” প্রতিবাসিনী কহিল, “একটু কৈলে বাচুরের চোন খাইয়ে দিও। শুনিয়াছি, তাহাতে বড় রস পরিপাক পায় ।” o বুড়ী বাড়ী গেলে, তাহার মনে পড়িল যে, ডাক্তার গরমে রাখার কথা বলিয়াছে। বুড়ী হীরার সম্মুখে এক কড়া আগুন আনিয়া উপস্থিত করিল। হীরা বলিল, “মর! আগুন কেন ?” বুড়ী বলিল, “ডাক্তার তোকে গরম করতে বলেছে।” দ্বিচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ অন্ধকার পুী—অন্ধকার জীবন গোবিন্দপুরে দস্তুদিগের বৃহৎ অট্টালিক্স, ছয় মহল ধাড়ী-নগেন্দ্র সূৰ্য্যমুখী বিন সব অন্ধকার। কাছারি বাড়ীতে আমলার বসে, অন্তঃপুরে কেবল কুন্দনন্দিনী, নিত্যপ্রতিপাল্য কুটুম্বিনীদিগের সহিত বাস করে। কিন্তু চন্দ্র বিনা রোহিণীতে আকাশের কি অন্ধকার যায় ? কোণে কোণে মাকড়সার জাল—ঘরে ঘরে ধূলার রাশি, কাৰ্ণিসে কাৰ্ণিসে পায়রার বাস, কড়িতে কড়িতে চড়ুই। বাগানে শুকন পাতার রাশি, পুকুরেতে পান। উঠানেতে