পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম পরিচ্ছেদ ঃ বাবু • অচলা থাকে। তোমার বাহন আলবল, হক, গুড়গুড়ি প্রভৃতি দেবকস্তার সর্বদাই যেন আমাদের নয়নপথে বিরাজ করেন, দৃষ্টিমাত্রেই মোক্ষলাভ করিব। হে হুকে। হে আলবলে ! হে কুণ্ডলার্কু শুধুমরাশিসমুদ্রগরিণি ! হে ফণিনীনিন্দিতদীর্ঘনলসংসপিণি! হে রঞ্জতকিরাটমণ্ডিতশিরোদেশমুশোভিনি । কিবা তোমার কিরীটবিস্রস্ত ঝালর ঝলমলায়মান । কিবা শৃঙ্খলাঙ্গুরীয় সস্তুতিবস্কাগ্রভাগ মুখনলের শোভা । কিবা তোমার গর্ভস্থ শীতলামুরাশির গভীর নিনাদ । হে বিশ্বরমে । তুমি বিশ্বজনশ্রমহারিণী, অলসজনপ্রতিপালিনী, ভাৰ্য্যাভৎসিশ জনচিত্তবিকারবিনাশিনী, প্রভুভীতজনসাহসপ্রদায়িনী ! মূঢ়ে তোমার মহিমা কি জানিবে ? তুমি শোকপ্রাপ্ত জনকে প্রবোধ দাও, ভয়প্রাপ্ত জনকে ভরসা দাও, বুদ্ধিভ্রষ্ট জনকে বুদ্ধি দাও, কোপযুক্ত জনকে শাস্তি প্রদান কর। হে বরদে। হে সৰ্ব্বমুখপ্রদায়িনি । তুমি যেন আমার ঘরে অক্ষয় হইয়া বিরাজ কর। তোমার স্বগন্ধ দিনে দিনে বাড়ুক। তোমার গর্ভস্থ জলকল্লোল মেঘগর্জনবৎ ধ্বনিত হইতে থাকুক ! তোমার মুখনলের সহিত আমার অধরেীষ্ঠের যেন তিলেক বিচ্ছেদ না হয়। ভোগাসক্ত দেবেন্দ্র যথেচ্ছ এই মহাদেবীর প্রসাদভোগ করিলেন—কিন্তু তাহাতে । পরিতৃপ্তি জন্মিল না। পরে অন্ত মহাশক্তির অর্চনার উদ্যোগ হইল। তখন ভৃত্যহন্তে, তৃণপটাবৃতা বোতলবাহিনীর আবির্ভাব হইল। তখন সেই অমল শ্বেত সুবিস্তৃত শয্যার উপরে, রজতামুকুতাসনে সান্ধ্যগগনশোভিরক্তাযুদকুল্যবর্ণবিশিষ্ট দ্রবময়ী মহাদেবী, ডেকান্টর নামে আস্বরিক ঘটে সংস্থাপিত হইলেন। কট গ্লাসের কোষ পড়িল ; প্লেটেড় দুর্গ তাম্রকুণ্ড হইল ; এবং পাকশাল হইতে এক কৃষ্ণকুর্চ পুরোহিত হইওয়াটর-প্লেট নামক দিব্য পুষ্পপাত্রে রোষ্ট, মটন এবং কট্‌লেট্‌ নামক মুগন্ধ কুসুমরাশি রাখিয়া গেল। তখন দেবেন্দ্র দত্ত, যথাশাস্ত্র ভক্তিভাবে, দেবীর পূজা করিতে বসিলেন। -- পরে তানপুর, তবলা, সেতার প্রভৃতি সমেত গায়ক বাদক দল আসিল । তাহার পুজার প্রয়োজনীয় সঙ্গীতোৎসব সম্পন্ন করিয়া গেল। - সর্বশেষে দেবেন্দ্রের সমবয়স্ক, সুশীতলকান্তি এক যুবাপুরুষ আসিয়া বসিলেন। ইনি দেবেক্সের মাতুলপুত্র স্বরেন্দ্র ; গুণে সৰ্ব্বাংশে দেবেক্সের বিপরীত। ইহার স্বভাবগুণে দেবেন্দ্রও ইহাকে ভালবাসিতেন। দেবেন্দ্র, ইহার ভিন্ন, সংসারে আর কাহারও কথার বাধ্য নহেন। মুরেন্দ্র প্রত্যহ রাত্রে একবার দেবেন্দ্রের সংবাদ লইতে আসিতেন । কিন্তু মদ্যাদির ভয়ে অধিকক্ষণ বসিতেন না। সকলে উঠিয়া গেলে, স্বরেন্দ্র দেবেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ তোমার শরীর কিরূপ আছে ?”