পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩২৪

 জয়নাল আবেদীনের চির-বিরহে আর আমাদিগকে কাঁদিতে হইল না। ঈশ্বরের কি মহিমা!

পঞ্চদশ প্রবাহ

 এই ত সেই মদিনার নিকটবর্ত্তী প্রান্তর। উভয় শিবিরের উচ্চ মঞ্চে রঞ্জিত মহানিশান উড়িতেছে, সমরাঙ্গণে সামরিক নিশান গগন ভেদ করিয়া বায়ুর সহিত ক্রীড়া করিতেছে—অস্ত্র অবিশ্রান্তে চলিতেছে, ‘মার্ মার্’ শব্দ হইতেছে। আজ ব্যুহ নাই, সৈন্যশ্রেণীর শ্রেণীভেদ নাই, অস্ত্রচালনার পারিপাট্য নাই, আত্মপর ভাবিয়া আঘাত নাই,—মরিতেছে, মারিতেছে, আহত হইয়া ভূতলে পড়িতেছে, হুহুঙ্কার বজ্রনাদে সমরাঙ্গণ কাঁপাইতেছে! আজ উভয় দলের সৈন্য-শোণিতে রণভূমি রঞ্জিত হইতেছে। জয়-পরাজয় কাহারও ভাগ্যে ঘটিতেছে না; কিন্তু অলীদ-সৈন্য অধিক পরিমাণে মারা পড়িতেছে। আজ মহাসংগ্রাম। উভয় দলে আজ বিষম সমর, দুর্ধর্ষ রণ। সৈন্যগণের চক্ষু ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে, মুখাকৃতি অতি কদর্য্য বিকৃত ভাব ধারণ করিয়াছে— তাহারা রোষে, ক্রোধে যেন উন্মত্ত হইয়াছে;— তাহাদের মুখব্যাদনে জিহ্বা, তালু, কণ্ঠ, কণ্ঠনালী পর্য্যন্ত দৃষ্ট হইতেছে। অস্ত্রঘাতে যুদ্ধ-প্রবৃত্তির নিবৃত্তি হইবে না—মনের তৃপ্তি জন্মিবে না বলিয়াই যেন নখাঘাত ও দন্তাঘাতের জন্য তাহার ব্যাকুল রহিয়াছে। প্রান্তরময় সৈন্য, প্রান্তরময় যুদ্ধ। হানিফা আজ স্বয়ং সৈন্যগণের পৃষ্ঠপোষক ও রক্ষক, গাজী রহমান পরিচালক! মহাবীর অলীদও আজ মহাবিক্রম প্রকাশ করিতেছে। এক প্রভাত হইতে অন্য প্রভাত গত হইয়াছে, এখন সূর্য্যদেব মধ্য গগনে, —কোন পক্ষই পরাজয় স্বীকার করিতেছে না—যুদ্ধও ইতি হইতেছে না। অলীদের প্রতিজ্ঞা,—আজ হানিকার শিরশ্ছেদ করিয়া জগতে মহাকীর্ত্তি স্থাপন করিবে। হানিফারও চেষ্টা যে, আজ মদিনার পথ পরিস্কার না করিয়া ছাড়িবেন না—হয় অলীদ-হস্তে জীবন বিসর্জ্জন, না হয় সসৈন্যে মদিনায় প্রবেশ।