পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিতীয় প্রবাহ

 সমরাঙ্গণে পরাজয়-বায়ু একবার বহিয়া গেলে সে বাতাস ফিরাইয়া বিজয়-নিশান উড়ান বড় শক্ত কথা। পরাজয়-বায়ু হঠাৎ চারিদিক হইতে মহাবেগে রণক্ষেত্রে প্রবেশ করে না; প্রথমতঃ মন্দ মন্দ গতিতে রহিয়া রহিয়া বহিতে থাকে, পরে ঝঞ্ঝাবাত সহ তুমুল ঝড়ের সৃষ্টি করিয়া এক পক্ষকে উড়াইয়া দেয়। নেতৃপক্ষের ঘন ঘন হুঙ্কারে, অস্ত্রের চাকচিক্যে মহাবীরের হৃদয়ও কম্পিত হয়, হতাশায় বুক ফাটিয়া যায়।

 আজ দামেস্ক-প্রান্তরে তাহাই ঘটিয়াছে। মদিনার সৈন্যদিগের চালিত অস্ত্রের চাকচিক্যে এজিদ-সৈন্য ক্ষণে ক্ষণে আত্মহারা হইতেছে। তাহারা, আসমানে কি জমিনে, তাহার কিছুই নির্ণয় করিতে পারিতেছে না। বিপক্ষগণের অস্ত্রের ঝন্‌ঝনা-শব্দে চমক ভাঙ্গিয়া রণরঙ্গের কথা তাহাদের মনে পড়িতেছে বটে, কিন্তু সে সময় প্রাণভয়ে তাহাদের প্রাণ চতুর্গুন আকুল হইতেছে;—তাহারা দেখিতেছে, যেন প্রান্তরময় বৃষ্টিপাত হইতেছে! গগনস্থ ঘনঘটা হইতে বৃষ্টি হইতেছে না, সে রক্তবৃষ্টি মেঘ হইতে ঝরিতেছে না, ঝরিতেছে দামেস্ক-সৈন্যের শরীর হইতে; আর ঝরিতেছে—আম্বাজী সৈন্যের তরবারির অগ্রভাগ হইতে। মেঘ-মালার খণ্ড খণ্ড অংশই শিলা,— তাহারও অভাব হয় নাই—খণ্ডিত দেহের খণ্ড খণ্ড অংশই সে ক্ষেত্রে শিলারূপ দেখাইতেছে।

 দামেস্ক-প্রান্তর দামেস্ক-সৈন্য-শোণিতেই ডুবিয়াছে।—রক্তের ঢেউ খেলিতেছে। মহাবীর হানিফার সম্মুখে যে সৈন্যদলই পড়িয়াছে, সংখ্যায় যতই হউক, তৃণবৎ উড়িয়া তাহারা খণ্ডিত দেহে ভূতলশায়ী হইয়াছে। সে রঞ্জিত তরবারিধারে খণ্ডিত দেহের রক্তধার, ধরণী বহিয়া মরুভূমি সিক্ত করিয়া, প্রান্তরময় ছুটিতেছে। কিন্তু হানিফার মনের আগুন নিভিতেছে না,— মদিনাবাসীর ক্রোধানল একটুও কমিতেছে না।