পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গোরা ভুত বেরিয়ে এই-সব ভাঙাচুলির ধারে বসে আগুন পোহায় আর মদ খায়, হুক্কা-হুয়া গান গায়।”

 ঠিক এই সময় শেয়াল-ডাকের মতো গান শোনা গেল, আর মেম সঙ্গে একটা গোরা বোতোল হাতে টলতে-টলতে আসছে দেখা গেল। ভালুককে দূর থেকে দেখেই গোরা যেমন বন্দুক উঁচিয়েছে, অমনি ভালুক চট করে গাছের তলার অন্ধকারে কালোয়-কালো মিশিয়ে গেছে! রিদয়ের গায়ে টকটকে মোজা—মেম তাকে ভাবলে কার পোষা ছোট বাঁদর, সে অমনি “মাংকি-মাংকি” বলে রিদয়কে ধরতে ছুটল! রিদয় তাড়াতাড়ি যেমন পালাতে যাবে অমনি পাহাড় থেকে গড়াতে-গড়াতে একেবারে কার্ট রোডে মাল-বোঝাই ছোট রেলের ছাতে এসে চিৎপাত!

 রেলটা ঝরনা থেকে হোঁস-ফোঁস করে খানিক জল ইঞ্জিনে ভরে নিয়ে ঘুম জোড়বাংলার দিকে এগিয়ে চলল ভকভক করে বকতে-বকতে। এদিকে ভালুকের কাছে খবর পেয়ে হাঁসেরা উড়েছে ঠিক রেলের সঙ্গে-সঙ্গে—তারা দেখছে, রিদয় মালগাড়ির উপরটায় যেন একটি লাল নিশেনের মতো লটপট করছে। ঘুম বস্তিতে এসে রেল থামল। হাঁসেরা অমনি হাঁক দিলে—“ঘুম লেক যাও তো নেমে পড়!” কিন্তু তখন গাড়ির ঝাঁকানিতে রিদয়ের ঘুম এসেছে, সে হাত নেড়ে জানালে—“দার্জিলিঙ যাব!” এই সময় গাড়ির মধ্যে থেকে একপাল ছেলে চেঁচিয়ে উঠল—“টু সোনাদা ঘুম!” রিদয় চমকে উঠে দেখলে গাড়ি ছেড়েছে।

 ঘুমের পরেই ‘বাতাসীয়া’ নতুন লাইন খুলেছে—এক-একটা পাহাড় কেটে সেগুলো কেল্লার বুরুজের মতো পাথরের টালি দিয়ে পাহাড়ি মিস্ত্রি সব গেঁথে তুলেছে। রিদয়ের মনে হল, ঠিক যেন কেল্লার মধ্যে ঢুকেছি! ঠিক সেই সময় হাঁসের দল ডাক দিলে—“বাতাসীয়া বাতাস-জোর, ধরে বস!” কিন্তু গুছিয়ে বসবার আগেই রিদয়ের বাতাসে লালা ছাতার মতো

৬(৬৯)
৮১