পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐতিহাসিক যুগের পূর্ববাধ্যায় ՀԳ এই মহাসৈন্য ও রাজাধিরাজগণ-পরিবৃত সম্রাট জরাসন্ধ যে তখন ভারতবর্ষের সৰ্ব্বপ্রধান রাজা ছিলেন, তাহা মহাভারতাদি পুরাণে পাঠ করিলে সহজেই বুঝা যায় । যে রাজধানীতে উত্তরকালে অশোক প্রভৃতি মৌৰ্য্যবংশীয় প্লাজাগণ আসীন ছিলেন, তৎপূর্বে মন্দবংশ, এবং মৌৰ্য্যবংশের রাজত্বের অবসানে, অন্ধ বংশ ও গুপ্তসমাটের অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেই রাজধানীর সর্বপ্রথম গৌরব জরাসন্ধের পিতা বৃহদ্ৰথ পৰ্ত্তন করিয়াছিলেন এবং সেই গৌরব-শিখা জরাসন্ধের সময় সমস্ত ভারতবষী আলোকিত করিয়াছিল । জরাসন্ধের পতাকানিমে শত শত শ্বেত রাজচ্ছি। গ্ৰ একত্ৰ দেখিযা কৃষ্ণ বলরামকে বলিয়াছিলেন, ‘মনে হইতেছে মথুরার আকাশে শত শত বলাকৰ পঙক্তি উড়িতেছোঁ৷ ” এই মহাসৈন্য হইতে ক্ষুব্ধ সাগরের হ্যায় একটা গভীর কলরব উত্থিত হইয়াছিলে ; হরিবংশকার বলিতেছেন, এই সময় তর্জনী হেলনপূর্বক এক সমুচ্চ মধ্য হইতে জরাসন্ধ বলিলেন “চুপ” । তখন হিমাদ্রিতুল্য স্থির কোন যোগিবরের ন্যান্য জরাসন্ধকে দেখা যাইতেছিল। তাহার সেই আদেশবাণী ইঙ্গিতে প্ৰচারিত হওয়ামাত্ৰ মহাসৈন্যসমূদ্র অকস্মাৎ স্তব্ধ হইয়া তুষ্ণীন্তাব অবলম্বন করিল, উত্তাল মহাসাগর যেন প্ৰশান্ত মহাসাগরে পরিণত হইল ; রাজাদিগকে সম্বোধন করিয়া তিনি সম্রাটের যোগ্য গম্ভীর কথায় জ্বালামনী এক বক্তৃতা করিলেন । এক সময়ে কৃষ্ণ ও বুর্গীয়ামের প্রতাপে জরাসন্ধের এই বিপুল সৈন্য প্ৰায় হতাশ হইয়া পড়িয়াছিল, তখন ত্বরিতগতিতে তিনি তাহদের সম্মুখীন হইয়া বলিলেন, “হে ক্ষত্ৰিয়গণ, তোমরা পলায়নোন্তত হইয়াছ কেন ? তোমাদিগকে ধিক্ । বেশ, তোমরা যুদ্ধ করিও না, এইখানে দাড়াইয়া থাক, আমি স্বয়ং এই দুইটি রাখালকে ( কৃষ্ণ-বলরাম ) একাই বধ করিব । cडोंगद्रा लैट्रिक्षेम। ऊाभ1भl cनभ ।” এই কথায় লজ্জিত হইয়া পলায়নপর সৈন্য ফিরিয়া আসিয়া আবার যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হইল । প্রবল দীর্ঘকাল স্থায়ী যুদ্ধের পরও যদুকুল পরাস্ত হইল না, বহু সৈন্য ক্ষয় হইল ; কিন্তু জরাসন্ধকে ফিরিয়া আসিতে হইল। এদিকে তাহার প্ৰিয় কন্যা অস্তি এবং প্ৰাপ্তির বিলাপ ও উত্তেজনায় তিনি স্থির থাকিতে পারিলেন না, তাহার যদুকুল ধ্বংস করিবার সঙ্কল্প অটল হইয়া রহিল, তিনি পুনঃ পুনঃ মথুরা আক্ৰমণ করিতে লাগিলেন। যদুকুল বিশেষরূপে বুঝিলেন, পরিণামে তাহারা জরাসন্ধের সঙ্গে আঁটিয়া উঠিতে পরিবেন। না। তঁহার জনবল এবং অধীন নৃপতিবর্গ অনেক বেশী ; বালির বাধা দিয়া এই মহাশ্রোত তাহারা কতদিন ঠেকাইয়া রাখিবেন ? তাহারা পরামর্শ করিয়া প্রিয়তম জন্মভূমি পরিত্যাগপূর্বক দূরদূরান্তরে বাস করিয়া নিরাপদে থাকাই শ্ৰেয়ঃ বোধ করিলেন। যদিও সমস্ত ধনসম্পত্তি লইয়া যাওয়া সম্ভবপর হইল না, তথাপি কতক কতক মূল্যৱান সামগ্ৰী লইয়া তাহারা পশ্চিমদিকে পলায়নপর হইলেন, এবং তথায় রৈবতক পৰ্ব্বত-বেষ্টিত রমণীয় কুশলীতে বাস করিতে লাগিলেন। কৃষ্ণ বলিলেন, “তথায় এরূপ দুৰ্গসংস্কার করিয়াছি যে, সেখানে থাকিয়া বৃষ্ণিবংশীয় মহারথগণের কথা দূরে থাকুক, স্ত্রীলোকেরাও অনায়াসে যুদ্ধ করিতে পারিষে।”