পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( o বৃহৎ বঙ্গ অনুরাগ আকর্ষণ করিবার জন্য বৌদ্ধগণ। গাৰ্হস্থ্যের প্রধান আকর্ষণ-স্ত্রীজাতির উপর ঘোর বিতৃষ্ণা জন্মাইবার জন্য এই সকল ঘুণ্য অপবাদের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। দুই একখানি বৌদ্ধজাতকে যে সকল ন্যাক্কারজনক উপকথা পাওয়া যায়-তাহো নিশ্চয়ই স্ত্রীজাতির প্ৰতি পুরুষের দুশ্চেন্তু স্বাভাবিক বন্ধন ছিন্ন করিবার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হইয়াছিল। “দুনিয়া সব বাউরা হোকর ঘর ঘর বাঘিনী পোষে।” প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত আধুনিক উক্তিও সেই প্ৰাচীন উদ্দেশ্যমূলক। গৃহীকে গৃহছাড়া করিবার উদ্দেশ্যে গৃহস্থের প্রধান অবলম্বন গৃহিণীকে এইভাবে নিন্দিত করা হইয়াছে। মহাভারতে এই যে ব্ৰাহ্মণের শেষ্ঠত্বের কথা আছে, তাহ প্ৰায় দ্বিসহস্ৰ বৎসর হিন্দু জনসাধারণের কর্ণে ধ্বনিত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ষকে এরূপ অদ্ভুত ও অচলা ব্ৰাহ্মণভক্তির লীলাভূমিতে পরিণত করিয়াছে। বৌদ্ধধৰ্ম্ম সমস্ত জাতির জন্য দীক্ষার দ্বার খুলিয়া দিলেনযজ্ঞধৰ্ম্মের ঘোর প্রতিবাদ করিলেন, তাহারও দ্বিসহস্ৰ বৎসর পরে চৈতন্য “চণ্ডালোং, পি দ্বিজশ্ৰেষ্ঠ; হরিভক্তিপরায়ণঃ” সাম্যের এই মহাবাণী প্রচার করিলেন । কিন্তু বৌদ্ধ যুগ হইতে এই সকল ধৰ্ম্মগুরুগণের সময় পৰ্য্যন্ত বাক্ষণের অবিসংবাদিত শ্ৰেষ্ঠত্বের দাবী কথঞ্চিত অস্বীকৃত হইলেও তঁহাদের জন্য একটা শ্ৰদ্ধাব আসন সর্বত্রই নির্দিষ্ট ছিল । অধুনা বাহ্মধৰ্ম্ম সেটুকুও অসাহা করিয়াছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণেৰ প্ৰতি কি গামোদ বিশ্বাস-কি অচলা ভক্তি হিন্দুসমাজের অস্থিপঞ্জিরে প্রবেশ করিয়া আছে । এখনও জনসাধারণের মধ্যে সে বিশ্বাস কতক পরিমাণে অনড় হইয়া রহিযাছে। স্ট্রীলোক কাহারও মুখ দেখিতে পরিবে না, মহাভারতীয় এই নীতির খুব বাড়াবাড়ি অভিনয় হইয়াছে। স্বৰ্গীযা রাসমণির জীবনচরিতে দেখিতে পাই যে, তিনি স্বামীর ঘোড়াটা দেখিয়া লজ্জায় এক হাত ঘোমটা টানিয়া দিয়া তথা হইতে পলাইয়া গিয়াছিলেন । ইহা গল্প-গুজব নহে, সীতাকার ঘটনা, রাসমণি স্বয়ং লিখিয়াছেন। ( রাসমণির জীবনী দ্রষ্টব্য । ) অবশ্য গাছ দেখিয়া লক্ষ্মজ্জা পাওয়ার উদাহরণ এখনও আমরা পাই নাই। প্রচলিত “অসুৰ্য্যাম্পশ্যা” কথাটাতে সূর্যের দৃষ্টি হইতেও মেয়েদের আত্মরক্ষার ইঙ্গিত আমরা পাইতেছি । জাতিভেদ এবং অন্নভোজনের যে কড়াকড়ি এদেশে হইয়াছে তাহাতে মনে হয়,-সমস্ত ধৰ্ম্মতত্ত্ব হাড়ীর মধ্যে নিক্ষেপ করিয়া নৈষ্টিক হিন্দু রন্ধনশালায় সতর্ক পাহারা দেওয়াই পরম ধৰ্ম্ম মনে করিয়া থাকেন । মহাভারতকার বলিয়াছেন, “শূদ্ৰান্ন, শিল্পী ও নিন্দিত ব্যক্তির অন্ন শোণিতসদৃশ” (অনুশাসন, ১৩৫ অধ্যায়)। উত্তর কালে বৌদ্ধ ধৰ্ম্মকে নিরস্ত করিয়া যে ব্ৰাহ্মণ্য-ধৰ্ম্ম শিরা উত্তোলন করিয়াছিল, তাহা এই সকল উপদেশ মূলধনের ন্যায় বিশে ভাবে আঁকড়াইয়া ধরিয়াছিল। সেই নবগঠিত সমাজের এই সূত্রগুলি ছিল ভিত্তিস্বরূপ । বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের মূল সূত্রগুলি হিন্দুদর্শনে পূর্বেই প্রচারিত হইয়াছিল, ষাজিক অনুষ্ঠান অনেক স্থলেই পরিত্যক্ত হইয়াছিল। মহাভারত ব্ৰাহ্মণদিগের মাহাঝ্যের অতিশয়োক্তি ও যজ্ঞের সমর্থন করিয়াও “জীবে দয়া” নীতির কথা ভুলিয়া যান নাই। মহাভারতের অনুশাসনপর্কে দেখিতে পাই, “মনুষ্যমাত্রেরই আত্মপ্ৰাণের ন্যায় অন্যান্য প্রাণীর প্রাণকে প্ৰিয়বস্তু বলিয়া