পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যা ও বিদ্বানের গৌরব Qహిలి তিনি চরিতাৰ্থ হইতেন । এ ব্যাপারেও আশ্চৰ্য্য হইবার বিষয় নাই---দরিদ্রের পক্ষে স্বপ্নে পাওয়া বাজ্যের মতনই তেঁাহাব সাম্রাজ্যলাভ আশাতীত সৌভাগ্যসূচনা করিয়াছিল। কিন্তু পালরাজগণ মন্ত্রীদিগকে যে সম্মান দিয়াছেন তাহাতে মনে হয় তৎকালে সৰ্ব্বসাধারণের ধারণা হইয়াছিল যে, রাজা অপেক্ষা বিদ্বানই শ্রেষ্ঠ। স্বয়ং নৃপতিরাও অকুষ্ঠিত চিত্তে এই প্ৰণতি ওঁ শ্ৰদ্ধা পণ্ডিতদিগকে দিতেন । গরুড় স্তম্ভলিপিতে দেবপাল সম্বন্ধে লিখিত আছে যে, সামন্ত নৃপতিগণের বিশালকায় হস্তিসমূহের পদধূলিতে সমস্ত দিক আচ্ছন্ন করিয়া দেবপালকে লোকলোচনের দৃষ্টির বহির্ভূত কবিয়া ব্যাখিত এবং পরাজিত ও মিত্র রাজাদের অসংখ্য সৈন্যগণের স্মাতায়াতে র্তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎকার সহজ ছিল না, এইরূপ প্ৰপাল পরাক্রান্ত একচ্ছত্ৰ সমাটু দেবপাল তদীয় মন্ত্রী দার্ভপাণির উপদেশ প্রাপ্তির জন্য অবসর খুজিয়া তদীয় গৃহদ্বারে প্ৰতীক্ষা করিতেন। মন্ত্রী দার্ভপাণি রাজসভায় উপস্থিত হইলে রাজা সর্বাগ্ৰে জ্যোৎমাধবল মহাৰ্ঘ সিংহাসনে তঁহাকে অধিষ্ঠিত করিয়া শেষে যেন সংস্কুচিত ভাবে তদীয় সিংহাসনে উপবেশন করিতেন। দীর্ভপাণি মন্ত্রী হইলেও তাহার কৰ্ম্মচারী ছিলেন । কৰ্ম্মচারীকে এতটা । সম্মান কোন রাজা দিয়াছেন ? ধৰ্ম্মপাল রাজার মন্ত্রী গর্গ স্পৰ্দ্ধার সহিত বলিতেন, “বৃহস্পতি ইন্দ্ৰকে দশদিকের একটি মাত্র দিকের অধিপতি করাইয়াছিলেন, সেই একটি দিকেও অসুরগণ র্তাহাকে প্রায়ই পাবাজিত করিতেন-বৃহস্পতি তাহা ঠেকাইতে পারিতেন না, কিন্তু আমি ধৰ্ম্মপাল রাজাকে অখিল দিকের স্বামী কারিয়া দিয়াছি।” এই ভাবের অহঙ্কারদীপ্ত কথা সেই মন্ত্রীর বংশধরেরা ধৰ্ম্মপাল ও তাহার বংশধরদের কৰ্ম্মচারী হইয়াও তাম্রশাসনে উৎকীর্ণ করিতেন। সুবপালেব মন্ত্রী কেদার মিশ গোড়া হিন্দু ছিলেন। পালরাজাদের অনেকেই বৌদ্ধভাবাপন্ন ছিলেন, তাহদের যজ্ঞাদি মান্য না করারই কথা ; কিন্তু গরুড়স্তম্ভলিপিতে উল্লিখিত হইয়াছে যে কেদার মিশ্র যখন স্বীয় গৃহে যজ্ঞ করিতেন, তখন সুরপাল স্বয়ং মন্ত্রীর উৎসবে তৎগৃহে উপস্থিত হইয়া অবনতমস্তকে যজ্ঞের বারি মস্তকে লাইতেন । 烈 বিক্রমশিলা-বিহারের কর্তৃত্ব সম্পূর্ণরূপে বিক্রমশীল রাজার উপরই ছিল। নালন্দা বিহার পণ্ডিতগণের দ্বারা পরিচালিত হইত, বিক্রমশিলা-বিহারের ভার শুধু রাজার উপর ন্যস্ত ছিল। রাজা স্বয়ং তথায় উপাধি ও পুরস্কাব বিতরণ করতেন। কিন্তু চীনদেশের পর্য্যটক বিস্ময়ের সাহিত লিখিয়াছেন যে, যখন রাজা স্বয়ং সেই বিহাবে প্ৰবেশ করিতেন তখন কোন ছাত্র বা অধ্যাপক ঠাতাকে দেখিয়া দাড়াইতেন না, কিংবা অপর কোন ভাবে সন্মান দেখাইতেন না। বিক্রমশিলা বৌদ্ধবিতাব ছিল, এখানেও বিদ্বান ও বিদ্যার্থীর সন্মান এতটা বেশী ছিল। এই উপলক্ষে আমাদেপ সৰ্ব্বদাই মনে পড়িবার কথা :- “বিদ্বন্বাঞ্চ নূপ ত্বঞ্চ নৈব তুলাং কদাচন। স্বদেশে পূজাতে রাজা বিদ্বান সৰ্ব্বত্র পুজ্যতে৷” এই বিস্তার যুগে বিদ্বানদিগেৰ প্ৰতি লোকের যে কতটা অনুরাগ ছিল এবং রাজবাজড়ায় পৰ্যন্ত বিজ্ঞানের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাবান ছিলেন তা হ’ব একটা প্রধান দৃষ্টান্ত এই যে, তিব্বতের