পাতা:বেলা অবেলা কালবেলা - জীবনানন্দ দাশ.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিতীয় সূর্যকে বুঝি শুধু অন্ন, শক্তি, অর্থ, শুধু মানবীর
মাংসের নিকটে এসে ভিক্ষা করে। সারা দিন— অনেক গভীর
রাতের নক্ষত্র ক্লান্ত হয়ে থাকে তাদের বিলোল কাকলীতে।
সকল নেশন আজ এই এক বিলোড়িত মহা-নেশনের
কুয়াশায় মুখ ঢেকে যে যার দ্বীপের কাছে তবু
সত্য থেকে—শতাব্দীর রাক্ষসী-বেলায়
দ্বৈপ-আত্মা-অন্ধকার এক-একটি বিমুখ নেশন।

শীত আর বীতশোক পৃথিবীর মাঝখানে আজ
দাঁড়ায়ে এ-জীবনের কতগুলো পরিচিত সত্ত্বশূন্য কথা—
যেমন নারীর প্রেম, নদীর জলের বীথি, সারসের আশ্চর্য ক্রেংকার
নীলিমায়, দীনতায় যেই জ্ঞান, জ্ঞানের ভিতর থেকে যেই
ভালোবাসা; মানুষের কাছে মানুষের স্বাভাবিক
দাবীর আশ্চর্য বিশুদ্ধতা; যুগের নিকটে ঋণ, মন-বিনিময়,
এবং নতুন জননীতিকের কথা—আরো স্মরণীয় কাজ
সকলের সুস্থতার— হৃদয়ের কিরণের দাবী করে; আর অদূরের
বিজ্ঞানের আলাদা সজীব গভীরতা;
তেমন বিজ্ঞান যাহা নিজের প্রতিভা দিয়ে জেনে সেবকের
হাত দিব্য আলোকিত ক’রে দেয়— সকল সাধের
কারণ-কর্দম-ফেণা প্রিয়তর অভিষেকে স্নিগ্ধ ক’রে দিতে;—

এই সব অনুভব ক’রে নিয়ে সপ্রতিভ হতে হবে না কি।
রাত্রির চলার পথে এক তিল অধিক নবীন
সম্মুখীন—অবহিত আলোকবর্ষের নক্ষত্রের।
জেগে আছো কথা ভেবে আমাদের বহিরাশ্রয়িতা
মানবস্বভাবস্পর্শে আরো ঋত—অন্তর্দীপ্ত হয়।