পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 এমন সময়ে একজন রমণী কর্কশ কণ্ঠে বলিয়া উঠিল,—“এই যে গা, এইখানে তােমাদের যুবরাজ—এইখানে!”

 দুই জন সৈন্য মশাল হাতে করিয়া যুবরাজের কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। দেখিতে দেখিতে আরাে অনেকে আসিয়া তাঁহাকে ঘিরিয়া ফেলিল। তখন সেই রমণী তাঁহার কাছে আসিয়া কহিল, “আমাকে চিনিতে পার কি গা! একবার এইদিকে তাকাও! একবার এইদিকে তাকাও।” যুবরাজ মশালের আলােকে দেখিলেন, রুক্মিণী। সৈন্যগণ রুক্মিণীর ব্যবহার দেখিয়া তাহাকে ধমক দিয়া কহিল, “দূর হ মাগী!” সে তাহাতে কর্ণপাতও না করিয়া কহিতে লাগিল—“এ সব কে করিয়াছে? আমি করিয়াছি। এ সব কে করিয়াছে? আমি করিয়াছি। এ সব সৈন্যদের এখানে কে আনিয়াছে? আমি আনিয়াছি। আমি তোমার লাগিয়া এত করিলাম, আর তুমি—যুবরাজ ঘৃণায় রুক্মিণীর দিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া দাঁড়াইলে!” সৈন্যগণ রুক্মিণীকে বলপূর্ব্বক ধরিয়া তফাৎ করিয়া দিল। তখন মুক্তিয়ার খাঁ সম্মুখে আসিয়া যুবরাজকে সেলাম করিয়া দাঁড়াইল। যুবরাজ বিস্মিত হইয়া কহিলেন—“মুক্তিয়ার খাঁ, কি খবর?”

 মুক্তিয়ার খাঁ বিনীতভাবে কহিল, “জনাব, আমাদের মহারাজের নিকট হইতে আদেশ লইয়া আসিতেছি!”

 যুবরাজ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি আদেশ!”

 মুক্তিয়ার খাঁ প্রতাপাদিত্যের স্বাক্ষরিত আদেশপত্র বাহির করিয়া যুবরাজের হাতে দিল।

 যুবরাজ পড়িয়া কহিলেন, “ইহার জন্য এত সৈন্যের প্রয়ােজন কি? আমাকে একখানা পত্র লিখিয়া আদেশ করিলেই ত আমি যাইতাম! আমি ত আপনিই যাইতেছিলাম, যাইব বলিয়াই স্থির করিয়াছি। তবে আর বিলম্বে প্রয়ােজন কি? এখনি চল। এখনি যশােহরে ফিরিয়া যাই।”