বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন—“দাদা কোথায়? উদয় কোথায়?”
মুক্তিয়ার খাঁ কহিল, “তিনি বন্দী হইয়াছেন—মহারাজের নিকট বিচারের নিমিত্ত প্রেরিত হইয়াছেন।”
বসন্তরায় বলিয়া উঠিলেন—“উদয় বন্দী হইয়াছে? বন্দী হইয়াছে খাঁ সাহেব? আমি একবার তাহাকে কি দেখিতে পাইব না?”
মুক্তিয়ার খাঁ যােড়হাত করিয়া কহিল —“না জনাব, হুকুম নাই!”
বসন্তরায় সাশ্রুনেত্রে মুক্তিয়ার খাঁর হাত ধরিয়া কহিলেন—“একবার আমাকে দেখিতে দিবে না খাঁ সাহেব!”
মুক্তিয়ার কহিল—“আমি আদেশ-পালক ভৃত্য মাত্র।”
বসন্তরায় গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন—“এ সংসারে কাহারাে দয়ামায়া নাই, এস সাহেব তােমার আদেশ পালন কর।”
মুক্তিয়ার তখন মাটি ছুঁইয়া সেলাম করিয়া যোড়হস্তে কহিল— “মহারাজ, আমাকে মার্জ্জনা করিবেন—আমি প্রভুর আদেশ পালন করিতেছি মাত্র, আমার কোন দোষ নাই।”
বসন্তরায় কহিলেন—“না সাহেব তােমার দোষ কি? তােমার কোন দোষ নাই। তােমাকে আর মার্জ্জনা করিব কি?” বলিয়া মুক্তিয়ার খাঁর কাছে গিয়া তাহার সহিত কোলাকুলি করিলেন—কহিলেন, “প্রতাপকে বলিও, আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া মরিলাম। আর দেখ খাঁ সাহেব, আমি মরিবার সময় তােমার উপরেই উদয়ের ভার দিয়া গেলাম, সে নিরপরাধ—দেখিও অন্যায় বিচারে সে যেন আর কষ্ট না পায়।”
বলিয়া বসন্তরায় চোখ বুজিয়া ইষ্ট-দেবতার নিকট ভূমিষ্ঠ হইয়া রহিলেন, দক্ষিণ হস্তে মালা জপিতে লাগিলেন—ও কহিলেন, “সাহেব এইবার!”
মুক্তিয়ার খাঁ ডাকিল, “আবদুল।” আবদুল মুক্ত তলােয়ার হস্তে