পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 প্রতাপাদিত্য কহিলেন—“হাঁ ছিল। ঠিক কথা বল। এখনাে আছে। দেখ মন্ত্রী, যতক্ষণ আমার মতের সহিত তােমার মত না মিলিবে, ততক্ষণ তাহা প্রকাশ করিও। সে সাহস যদি না থাকে তবে এ পদ তােমার নহে। সন্দেহ থাকে ত বলিও। আমাকে বুঝাইবার অবসর দিও। তুমি মনে করিতেছ নিজের পিতৃব্যকে হনন করা সকল সময়েই পাপ। ‘না’ বলিও না, ঠিক এই কথাই তােমার মনে জাগিতেছে। ইহার উত্তর আছে। পিতার অনুরােধে ভৃগু নিজের মাতাকে বধ করিয়াছিলেন, ধর্ম্মের অনুরােধে আমি আমার পিতৃব্যকে বধ করিতে পারি না?”

 এ বিষয়ে — অর্থাৎ ধর্ম্ম অধর্ম্ম বিষয়ে যথার্থই মন্ত্রীর কোন মতামত ছিল না। মন্ত্রী যতদূর তলাইয়াছিলেন, রাজা ততদূর তলাইতে পারেন নাই। মন্ত্রী বিলক্ষণ জানিতেন যে, উপস্থিত বিষয়ে তিনি যদি সঙ্কোচ দেখান, তাহা হইলে রাজা আপাতত কিছু রুষ্ট হইবেন বটে, কিন্তু পরিণামে তাহার জন্য মনে মনে সন্তুষ্ট হইবেন। এইরূপ না করিলে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এককালে-না-এককালে রাজার সন্দেহ ও আশঙ্কা জন্মিতে পারে।

 মন্ত্রী কহিলেন “আমি বলিতেছিলাম কি, দিল্লীশ্বর এ সংবাদ শুনিয়া নিশ্চয়ই রুষ্ট হইবেন।”

 প্রতাপাদিত্য জ্বলিয়া উঠিলেন “হঁ হাঁ রুষ্ট হইবেন! রুষ্ট হইবার অধিকার ত সকলেরই আছে। দিল্লীশ্বর ত আমার ঈশ্বর নহেন। তিনি রুষ্ট হইলে থরথর করিয়া কাঁপিতে থাকিবে এমন জীব যথেষ্ট আছে, মানসিংহ আছে, বীরবল আছে, আমাদের বসন্ত রায় আছেন, আর সম্প্রতি দেখিতেছি তুমিও আছ; কিন্তু আত্মবৎ সকলকে মনে করিও না।”

 মন্ত্রী হাসিয়া কহিলেন “আজ্ঞা, মহারাজ ফাঁকা রােষকে আমিও বড় একটা ডরাই না, কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে ঢাল তলােয়ার যদি থাকে তাহা হইলে ভাবিতে হয় বৈ কি! দিল্লীশ্বরের রােষের অর্থ পঞ্চাশ সহস্র সৈন্য।”