পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
বৌ ঠাকুরাণীর হাট

 বিভা। “দাদামহাশয় আসিয়াছেন?”

 সুরমা। “হাঁ।”

 বিভা আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিল “কখন্ আসিয়াছেন?”

 সুরমা। “প্রায় চার প্রহর বেলার সময়।”

 বিভা। “এখনো যে আমাদের দেখিতে আসিলেন না।”

 বিভার মনে ঈষৎ অভিমানের উদয় হইল। দাদা মহাশয়ের দখল লইয়া বিভা অতিশয় সতর্ক। এমন কি, এক দিন বসন্তরায় উদয়াদিত্যের সহিত অনেকক্ষণ কথােপকথন করিয়া বিভাকে অন্তঃপুরে তিন দণ্ড অপেক্ষা করাইয়াছিলেন, একবারেই তাহার সহিত দেখা করিতে যান নাই, এই জন্য বিভার এমন কষ্ট হইয়াছিল যে, যদিও সে বিষয়ে সে কিছু বলে নাই বটে তবু প্রসন্ন মুখে দাদামহাশয়ের সঙ্গে কথা কহিতে পারে নাই।

 বসন্তরায় ঘরে প্রবেশ করিয়াই হাসিতে হাসিতে গান ধরিলেন;—

“আজ তােমারে দেখ্‌তে এলেম অনেক দিনের পরে!
ভয় নাইক, সুখে থাক,
অধিক ক্ষণ থাক্‌ব নাক’
আসিয়াছি দুদণ্ডেরি তরে!
দেখ্‌ব শুধু মুখ খানি
শুন্‌ব দুটি মধুর বাণী
আড়াল থেকে হাসি দেখে চলে যাব দেশান্তরে!”

 গান শুনিয়া বিভা মুখ নত করিয়া হাসিল। তাহার বড় আহ্লাদ হইয়াছে। অতটা আহ্লাদ পাছে ধরা পড়ে বলিয়া বিব্রত হইয়া পড়িয়াছে।

 সুরমা বিভার মুখ তুলিয়া ধরিয়া কহিল, “দাদা মহাশয়, বিভার হাসি দেখিবার জন্য ত আড়ালে যাইতে হইল না?”

 বসন্তরায়। “না। বিভা মনে করিল, নিতান্তই না হাসিলে যদি