পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্গ ও নরক।
৬৫

তখনই আত্মাতে আত্ম-প্রসাদ অবতীর্ণ হয়। আত্মার বল বীর্য্য এই প্রকারেই উপার্জ্জন হয়। এই সকল সংগ্রাম স্থলেই আমাদের পরীক্ষা ও শিক্ষা হয়। এই হেতু ঈশ্বর আমাদিগকে সংসারে চির দিন সুখের ক্রোড়ে শয়ান রাখেন নাই। তিনি আমাদিগকে নানা কঠোর অবস্থাতে নিক্ষেপ করিয়া আমাদিগকে শিক্ষা প্রদান করিতেছেন। দেব-ভাব, পশু-ভাব—কুপ্রবৃত্তি, সুপ্রবৃত্তির সংগ্রামে আমরা ধর্ম্মবল উপার্জ্জন করি।

 যাহারা স্বর্গকে বিষয়-সুখের ধাম বলিয়া বর্ণনা করে, তাহাদের ভ্রম এস্থানে স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। এখানে আত্মপ্রসাদই স্বর্গের পূর্ব্বাভাস; কিন্তু তাহারদিগের মতে সেই স্বর্গেতে বিষয়-সুখই রাশীকৃত সঞ্চিত হইয়াছে। যে সকল কামনা এই মর্ত্যলোকে দুর্লভ, তাহাই সেখানে পূর্ণ হইবে। “সরথা সতূর্য্যা অপ্সরা, মহদায়তন সুগন্ধ কানন, সুশীতল অবিরল ছায়া, বিস্তীর্ণ বিমলা নদী, এই সকল স্বর্গলোকে প্রচুর-রূপে পাওয়া যাইবে। এই সমুদয় প্রাপ্ত হওয়া আমাদের সমুদায় ধর্ম্ম-কার্য্যের শেষ ফল! এখানে কিঞ্চিৎ ত্যাগ স্বীকার করিতে পারিলে স্বর্গলোকে আমরা অশ্ব রথ গজে পরিবৃত হইব। এখানে কামোপভোগ হইতে বিরত হইলে স্বর্গলোকে উৎকৃষ্ট সুরা, অপ্সরা, মর্ত্যলোকের দুর্ল্লভ ভোগ-সকল লাভ হইবে। স্বর্গের এই প্রকার ভাব কি হীন ভাব! ইহাতে আমাদের তাাত্মা কখনই সায় দেয় না।

 বিষয়-সুখই কি আমাদের পরম পুরুষার্থ? আমাদের সমুদায় ধর্ম্ম-কার্য্যের শেষ কল কি অকিঞ্চিৎকর বিষয়-সুখ?