পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
অষ্টম উপদেশ।

আমাদের সমুদায় আশা ভরশা কি এই প্রকার সুখেতে পর্য্যবসান হইতে পারে? ইহা অপেক্ষা উন্নত উদ্ধত পবিত্র ফল কি আর কিছুই নাই? হে ভদ্র! হে বিদ্ব‌্ন! তুমি কি মনে কর, তোমাকেই আমি জিজ্ঞাসা করি। মনে কর, এখানে তোমার সকল ইচ্ছা চরিতার্থ হইয়াছে, তুমি এখানকার সকল কামনার কামভাগী হইয়াছ, পার্থিব সুখের কোন অভাব নাই; ধন, মান, যশ, প্রভুত্ব, অপর্য্যাপ্ত রূপে ভোগ করিতেছ; এই কি তোমার পরম প্রার্থনীয় অবস্থা? এই অবস্থাতেই কি তুমি চিরকাল পরিতৃপ্ত থাকিতে পার? এই সুখ-প্রদর্শন যদি অনন্ত কাল পর্য্যন্ত তোমার সম্মুখে বিস্তৃত থাকে, তাহাতেই কি তুমি আপনাকে কৃতার্থ বোধ কর? না তোমার আত্মা ইহা অপেক্ষা মহত্ত্বর উচ্চতর বিষয় চায়? মনুষ্যের আত্মা এই সকল প্রশ্নে এই একই উদ্ভর দেয়, যে আত্মার যে স্পৃহা ও আশা, বিষয়-সুখে তাহার কিছুই পূর্ণ হয় না।

 সহস্র সহস্র ইন্দ্রিয়-সুখ, সহস্র সহস্র কৃত্রিম শোভায়। অনুরঞ্জিত হইলেও আমাদের আত্মাকে পূর্ণ ও পরিতৃপ্ত করিতে পারে না। নির্দ্দোষ ইন্দ্রিয়-সুখ অবশ্য সেব্য, তাহার সন্দেহ নাই। শোভা সঙ্গীত সৌগন্ধে পরিবৃত মনোহর উদ্যান বা উন্নত প্রাসাদে বাস করা—যে সকল স্থানে কর্ণ কোন অশ্রাব্য সুর শুনিতে পায় না, চক্ষু কোন কুৎসিত রূপ দেখিতে পায় না, এমন সকল স্থানে কালক্ষেপ করা—নানাবিধ ভোগ্য সামগ্রীতে আমাদের পশুপ্রকৃতিকে চরিতার্থ করা; এ সকল সামান্য সুখ নহে।