পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
দশম উপদেশ।

তীত নিত্য ভূমা পরমেশ্বরের সঙ্গে সম্বদ্ধ নিবদ্ধ করে এবং তাঁহার অখণ্ড মঙ্গল-স্বরূপে নির্ভর করিয়া জীবন যাত্রা নির্ব্বাহ করে।

 আমাদের জ্ঞান ও ভাব ও ইচ্ছা ঈশ্বরের জ্ঞান প্রীতি ও ইচ্ছার সহিত যত মিলিত হইবে; তত আমাদের আত্মা মুক্ত ভাব ধারণ করিবে। জ্ঞান ব্যতীত আমরা মুক্ত হইতে পারি না; কেন না স্বাধীনতা জ্ঞানজ্যোতি হইতে পরিচ্যুত হইলে তাহা অন্ধ শক্তির ন্যায় কার্য্য করে। মঙ্গল ভাব ব্যতীতও আমরা মুক্ত হইতে পারি না, কেননা নীচ পশু-ভাবের অধীন হইলে আমাদের প্রকৃতি নিতান্ত হীন ও মলিন হইয়া থাকে। আমাদের জ্ঞানের মুক্তাবস্থায় সেই সত্য-স্বরূপ আমাদের জ্ঞানের অন্ন হইবেন, তাঁহার মহিমা আরো উজ্জ্বল রূপে দেখিতে পাইব। আমাদের ভাবসকল তখন মুক্ত হইবে, যখন তাহারা ঈশ্বর-প্রীতির পরূ ধারণ করিবে; যখন সত্যেতে মঙ্গলেতে তাহারা সমর্পিত হইবে। ইচ্ছার মুক্ত ভাব তখন হইবে, যখন তাহা নীচ বিষয়াকর্ষণ অতিক্রম করিয়া পূর্ণ সত্য, পূর্ণ মঙ্গলের অনুযায়ী হইবে। আমাদের বদ্ধ-ভাব গিয়া মুক্ত-ভাব ক্রমে হইতে থাকে। ঈশ্বরই এক মাত্র শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্ত স্বরূপ। তাঁহার জ্ঞান মোহেতে আচ্ছন্ন নহে; তাঁহার প্রীতির সঙ্গে দ্বেষের যোগ নাই; তাঁহার ইচ্ছা মঙ্গলের বিরোধিনী নহে; কিন্তু আমাদের যে জ্ঞান, ভাব ও ইচ্ছা, তাহা অল্পে অল্পে শুদ্ধ ভাব ও স্বাধীন ভাব ধারণ করে। অজ্ঞান পাশ কুটিলতার পাশ বিষয় বন্ধন হইতে আমরা ক্রমে মুক্ত হই।