পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে স্থান পায়নি। আবার মাথা বিগড়ে দেবার মতো বিলাসী বেহিসাবী অভ্যাসকেও কখনো বাড়িতে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের বাপমা একটু বেশিরকম সাধাসিধে ভাবেই আমাদের শিক্ষাদীক্ষা দিয়েছিলেন।

মনে পড়ে ছেলেবেলায় নিজেকে কি রকম যেন তুচ্ছ মনে হত। বাবামাকে সাংঘাতিক ভয় করতাম। বাবা সাধারণত এমন গম্ভীর হয়ে থাকতেন যে আমরা কেউ তাঁর কাছে ঘেঁষতেই সাহস পেতাম না। আইনব্যবসা তো ছিলই, তার উপরে বাইরের আরো কত কাজ যে তাঁর থাকত তার ইয়ত্তা নেই, ফলে সংসারের দিকে নজর দেবার মতো অবসর তিনি সামান্যই পেতেন। এই সামান্য সময়টুকু তাঁকে সব সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হত। সবচেয়ে ছোটো যে, তার ভাগে অবিশ্যি, আদর একটু বেশিই পড়ত, কিন্তু তাও বেশিদিন স্থায়ী হত না, ঘরে নতুন অতিথির আবির্ভাব হলেই বাড়তি ভাগটুকু নবাগতের জন্য বরাদ্দ হত। বড়দের ব্যাপারে বাবা এত নিরপেক্ষ ছিলেন যে ঘুণাক্ষরেও কখনো বোঝা যেত না তিনি কার সম্বন্ধে কী ভাবতেন। মাও ছিলেন তনেকটা বাবারই মতো। অবিশ্যি মন তাঁর স্বভাবতই বাবার চাইতে কোমল ছিল, এবং সময়ে সময়ে তাঁর পক্ষপাতিত্ব যে টের পাওয়া যেত না তা নয়, তা সত্ত্বেও আমরা সবাই মাকে দস্ত‌ুর মতো ভয় করে চলতাম। বাড়িতে কেউই তাঁর কথার উপর কথা বলতে সাহস করত না। সংসারের পূর্ণ কর্তৃত্বের ভার ছিল তাঁর উপর। তাঁর এই প্রতিপত্তির মূলে ছিল তাঁর অসাধারণ সাংসারিক বুদ্ধি আর প্রখর ব্যক্তিত্ব। ছেলেবেলা থেকেই বাবামাকে মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করে এসেছি সত্যি, কিন্তু তবু তাঁদের আরো ঘনিষ্ঠভাবে জানবার জন্য মন আকুল হয়ে উঠেছে—এজন্যই, যেসব ছেলেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে