পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করাই আমার কর্তব্য। কিন্তু সে সংগ্রাম করিতে হইবে একাকী কর্তৃপক্ষের হুমকির মধ্য দিয়া, অস্বাস্থ্যকর স্থানে বদলি সহ্য করিয়া, উন্নতির পথ বন্ধ করিয়া। চাকুরির মধ্যে থাকিয়া এইভাবে যেটুকু উপকার করা যায় সেটুকু বাহিরে পুরাপুরি কাজে লাগার তুলনায় যৎসামান্য। শ্রীযুত রমেশচন্দ্র দত্ত অবশ্যই সার্ভিসের আওতায় অনেক কাজ সম্পন্ন করিয়াছিলেন, তবু আমার মনে হয় আমলাতন্ত্রের বাহিরে থাকিলে তাঁহার কাজ দেশের পক্ষে অনেক অধিক মঙ্গলজনক হইত। তাহা ভিন্ন এখানে আসল প্রশ্ন নীতির। নীতি অনুসারেই আমি এই শাসনযন্ত্রের অংশ হওয়ার কথা চিন্তা করিতে পারি না। গোঁড়ামিতে, স্বার্থান্ধ শক্তিতে, হৃদয়হীনতায়, সরকারী মারপ্যাঁচের জটিলতায় এই শাসনযন্ত্র বিকল, ইহার প্রয়োজনের দিন বিগত।

“আমি স্পষ্ট বুঝিতে পারিতেছি যে আমি দুই পথের সংযোগস্থলে উপস্থিত, মধ্যপথ আশ্রয় করিবার কোনো উপায় নাই। হয় আমাকে এই গলিত চাকুরির মায়া ছাড়িয়া সর্বান্তঃকরণে দেশের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করিতে হইবে, নয় সমস্ত আদর্শ আকাক্ষায় জলাঞ্জলি দিয়া সিভিল সার্ভিসের কক্ষপটে সমাধিলাভ করাই আমার ভবিষ্য বলিয়া মানিতে হইবে। ... আমি জানি আমার এই বিপজ্জনক হঠকারিতায় আত্মীয়মহলে তুমুল শোরগোল উঠিবে।...কিন্তু তাঁহাদের মতামতে, নিন্দায় প্রশংসায় আমার কিছু আসে যায় না। আপনার আদর্শবাদে আমার আস্থা আছে তাই আপনার নিকট পরামর্শ ভিক্ষা করিতেছি। পাঁচ বৎসর পূর্বে এই সময়ে আমার আরেক বিপজ্জনক প্রচেষ্টায় আপনার নৈতিক সমর্থন পাইয়াছিলাম। সে প্রচেষ্টায় আমার ভবিষ্যৎ কিছুকালের জন্য অন্ধকার বোধ হইয়াছিল, তবু আমি তাহার সমস্ত ফলকে নির্ভয়ে মাথা পাতিয়া নিয়াছিলাম, কখনো নিজের নিকট

১৩৯