পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মধ্য দিয়েই আমার বহুদিন কেটেছে। মনের দ্বন্দ্বটাই বেশি পীড়াদায়ক ছিল, না বাইরের বাধাবিঘ্ন জয় করাটাই বেশি কষ্টকর ছিল তা বলা কঠিন। আমার মনের জোর যদি একটু বেশি থাকত কিংবা একটু স্থ‌ূলপ্রকৃতির হত তবে এত কষ্ট আমাকে পেতে হত না, অনেক সহজেই জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু তা না হওয়াতে আমাকে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়েছে। বাবামা যতোই আমাকে বাধা দিতে চেয়েছেন আমিও ততই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছি। যখন অন্য কোনোভাবে আমাকে বাগে আনতে পারলেন না, মা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। কিন্তু চোখের জলেও আমার মন ভিজল না। বরং বিরক্ত হয়ে আমি আরো বেশি অবাধ্য এবং খামখেয়ালী হয়ে উঠলাম, কোনোরকম শাসনই আমার উপর খাটল না। অবশ্য এজন্য মনে মনে আমি অত্যন্ত অশান্তি ভোগ করেছি। বাপমায়ের অবাধ্য হওয়া যে আমার পক্ষে কতখানি পীড়াদায়ক ছিল তা বলে বোঝানো যায় না, কারণ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমার স্বভাববিরুদ্ধ। কিন্তু আমার কাছে সবার উপরে তখন আদর্শ—সেই আদর্শের কাছে আর সবই তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে খারাপ লাগত যখন দেখতাম বাড়িতে কেউই আমাকে অন্তরঙ্গভাবে বুঝতে চেষ্টা করছে না, আমার ভিতরে যে অসহ্য দ্বন্দ্ব চলছে তার খোঁজ রাখছে না। একমাত্র সান্ত্বনা পেতাম বন্ধুদের কাছে—কাজেই যতক্ষণ বাড়ির বাইরে বন্ধুদের মাঝে থাকতাম অতটা কষ্ট হত না।

লেখাপড়ায় আর মন বসতে চাইত না। শ‍ুধু গোড়ার দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম বলেই কোনোরকমে মান রক্ষা হয়েছিল, নয়তো একেবারে তলিয়ে যেতাম। লেখাপড়া ছেড়ে এখন আমার একমাত্র কাজ হল যোগ অভ্যাস করা। যোগ শেখাতে পারে,

৪৭