পাতা:ভারতপথিক রামমোহন রায়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হচ্ছে— ধর্মের বলে ভেদের মধ্যে অভেদের সেতু স্থাপন করা। সে কেমন করে হতে পারে? না, সকল ধর্মের বাহিরে দেশকালের আবর্জনা জমে উঠে তার সাম্প্রদায়িক রূপকে কঠিন করে তোলে— সে দিকে এক সম্প্রদায়ের লোক অন্য সম্প্রদায়কে বাধা দেয়, আঘাত দেয় কিন্তু তাদের মধ্যে যে অন্তরতম সত্য সেখানে ভেদ নেই, বাধা নেই। এক কথায় অবিদ্যার মধ্যেই বাধা, অজ্ঞানের বাধা। যেখানে কোনো-এক শাস্ত্রে বলে বাসুকির মাথার উপরে পৃথিবী স্থাপিত; সেখানে আর-এক শাস্ত্র বলে দৈতোর কাঁধের উপর পৃথিবী স্থাপিত; এই মতভেদ নিয়ে আমরা যদি খুনোখুনি করি তবে সেই অজ্ঞানের লড়াই বাইরের দিক থেকে কিছুতেই মিটতে পারে না। কিন্তু জ্ঞানের দিকে বিরোধ মেটে এইজন্যে যে, সেখানে বিশ্বাসের যে আদর্শ সে বিশ্বজনীন বুদ্ধি; সে প্রথাগত বিশ্বাস নয়, লোকমুখের কথা নয়।

 আধ্যাত্মিক সাধনার মধ্যে বিশ্বজনীনতা আছে, সাম্প্রদায়িক প্রথার মধ্যে নেই। সেইজন্য ভারতবর্ষের ঐক্যসাধক ঋষিরা সকল ধর্মের মূলে যে চিরন্তন ধর্ম আছে তাকেই ভেদবোধপীড়িত মানুষের কাছে উদ‍্ঘাটিত করেছিলেন। শাস্ত্র সাময়িক ইতিহাসের, আত্মপ্রত্যয় চিরকালের। শাস্ত্র ভেদ ঘটায়, আত্মপ্রত্যয় মিলন আনে। দাদূ কবীর নানক প্রভৃতি মধ্যযুগের ভারতীয় সাধকেরা ধর্মের শাস্ত্রীয় বাহ্যরূপের বাধা ভেদ করে এক পরম সত্যের আধ্যাত্মিক রূপকে প্রচার করেছিলেন। সেইখানেই সকল বিরোধের সমন্বয়।

{rh||৫৯|}}