পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भोंकि यहांदनी হয় তবে আর উপায় থাকিবে না। কিন্তু মামা যেন কেমন উদভ্ৰান্ত হইয়া গিয়াছে, সে বিশ্রাম করিতে পারে না, প্রয়োজনের খাটুনি খাটিয়া খাটয়া তো সারা হয়ই, বিনা প্ৰয়োজনেও খাটিয়া মরে। দুৱানী যথাসময়ে মারা গেল, বকুলের সেদিন জর ছাড়িয়াছে। বর্ষার সেটা খাপছাড়া দিন,-কি রোদ বাহিরে, মেঘশূন্য কি নির্মল আকাশ! কেবল শুমার নিদ্রাতুর আরক্ত চোখে জল আসে। এ ক'দিন শ্যামা যেন ছিল একটা কামনার রূপক, সন্তানকে সুস্থ করার একটি জ্বলন্ত ইচ্ছা-শিখা-আজ তাহাকে চেনা যায় না। চৌদ্দ দিনে বকুলের জর ছাড়িয়াছে ? কিসের চৌদ্দ দিন,- চৌদ্দ যুগ। শ্রাবণের শেষে মামা একদিন দোকানটা বেচিয়া দিল । দোকান করা মামার পোষাইল না। ভদ্রলোক দোকান করিতে পারে ? শ্যামা হাসিয়া বলিল-তখনি বলেছিলাম মামা, দিও না দোকান, তুমি কেন দোকান চালাতে পারবে ?-কত টাকা লোকসান দিলে ? মামা বলিল-লোকসান দেব আমি ? কি যে তুই বলিস শ্যাম । --তাহলে কত টাকা লাভ হল। তাই বল ? --না লাভ হয় নি, টায়-টায় দেনা-পাওনায় মিল খেয়েছে, ব্যস। যে দিনকাল পড়েছে শ্যামা, আমি বলে তাই, আর কেউ হলে ঘর থেকে টাকা ঢেলে খালি হাতে ফিরে অসিত, কত কোম্পানী এবার লালবাতি জেলেছে জানিস ? দোকান বেচিয়া মামা এবার করিবে কি ? যে দুৰ্নিৰ্ণেয় উৎস হইতে দরকার হইলেই দশ-বিশটা টাকা উঠিয়া আসে, চিরকাল তাহ টিকিবে তো ? মামা কিছু বলে না। করুণভাবে মামা শুধু একটু হাসে, উৎসুক চোখে আকাশের দিকে তাকায়। শরৎ মানুষকে ঘরের বাহির করে, বর্ষান্তে নবযৌবনা ধরণীর সঙ্গে মানুষের পরিচয় কাম্য, কিন্তু বর্ষা তো এখনো শেষ হয় নাই মামা, ওই দেখো আকাশে নিবিড় কালো সজল মেঘ, শরৎ কোথায় যে তুমি দেশে দেশে নিজের মনের মৃগয়ায় যাইতে চাও ? মামার বিষন্ন হাসি, উৎসুক চোখ, শ্যামাকে ব্যথা দেয় । শ্যামা ভাবে, কিছু করিতে না পারিয়া হার মানার দুঃখে মামা ত্ৰিয়মাণ হইয়া গিয়াছে, ভায়ীর ভার লইবে বলিয়া অনেক আস্ফালন