পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী স্বাভাবিক বিপদে সম্পদে, যার মহা সমন্বয় সংসারধর্ম । বহু দিনের দুর্ভাবনায়, বনগার পরাশ্ৰিত জীবনযাপনে, শ্যামার মনে যদি বৈকল্য আসিয়া থাকে, ছেলের চাকরি, অন্ধ মেয়ের জন্ম, বকলের এভাবে আসিয়া পড়া, এতাতেও সেটুকু কি শোধরাইবে না ? আগের মত হওয়া শ্যামার পক্ষে আর সম্ভব নয়, তবু পরিবর্ণিতত, পরিশ্রান্ত ক্ষয় পাওয়া শ্যামার মধ্যে একটু শক্তি ও উৎসাহ, একটু চাঞ্চল্য ও মুখরতা এখন আসিতে পারে, আসিতে পারে জীবনের হাসিকান্নার আরও তেজী মোহ, সুখের নিবিড়ােতর স্বাদ । মহোৎসাহে শ্যামা বকুলের সেবা আরম্ভ করিল। বনগাঁয়ে চুরি করিয়া বিধানকে সে ভাল জিনিস খাওয়াইতি, এখানে নিজের মুখের খাবারটুকু সে মেয়ের মুখে তুলিয়া দিতে লাগিল। নব্বই টাকা আয়ে তো। কলিকাতা শহরে রাজার হলে থাকা যায় না, নিজেকে বঞ্চিত না করিয়া মেয়েকে দিবার দুধ টুকু ঘিটুকু ফলটুকু কোথায় পাইবে সে ? কচি মেয়ে মাই খায়, শ্যামার নিজেরও দারুণ ক্ষুধা, পাতের মাছটি তবুও বকুলের পাতে তুলিয়া দেয়, মণিকে দিয়া চিনিপাত দই আনায় দু’পয়সার, বলে, দই মুখে, রুচিবে লো, ভাতকটা সব মেখে খেয়ে নে চেছে পুছে, লক্ষ্মী খা । দই খেলে আমার বমি আসে, তুই খ তো । ওমণি, দে বাবা, একটু আচার এনে 6 ििक । বকুলকে সে বসাইয়া রাখে, কাজ করিতে দেয় না। দেখিতে দেখিতে বকুলের চেহারার উন্নতি হয়। কিন্তু মুস্কিল বাধায় সরযু। বলে,-মেয়েকে কাজকর্ম করতে দিচ্ছ না, এ কিন্তু ভাল নয়। ভাই । শ্যামা বলে, খেটে খেটে সারা হয়ে এল, ওকে আর কাজ করতে দিতে কি মন সরে দিদি ? অল্পবিস্তর কাজ ধরতে গেলে করে বৈকি মেয়ে, বিছানা টিছানা পাতে। বিকেলে খানিকক্ষণ হেঁটেও বেড়ায় ছাতে, তা তো দেখতেই পাও ? মনে হয়। সরযুর অনধিকার চর্চায় শ্যামা রাগ করে। পাশকরা ধাত্রী। পাঁচটি সন্তানের জননী সে মেয়ের কিসে ভাল কিসে মন্দ সে তা বোঝে না, পাশকরা ধাত্রী তাহাকে শিখাইতে আসিয়াছে ! dyras