পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী দিনে বিশ্রাম নাই, রাত্রে ঘুম নাই। সেই যে কবে একদিন যশোদা তাকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানাইয়াছিল, তারপর হইতে জ্যোতিৰ্ম্ময় বঁাচিয়াই আছে এই একটিমাত্ৰ উদ্দেশ্য নিয়া নন্দর একটি চাকরী। বিরক্তির সঙ্গে যশোদার কৌতুক বোধ হয়, কৌতুক বোধের সঙ্গে একটু দরদও জাগে । নিজের কোন একটা সমস্যা নিয়া বেচারী হয়তো দিবারাত্রি ব্যতিব্যস্ত হইয়া আছে, এখনো হয়তো সেই কথাই ভাবিতেছে, এই সব জমা করা চিন্তা আর উদ্বেগ যশোদার মন রাখার ব্যাকুলতায় কেন্দ্ৰচু্যত হইয়া কিছুক্ষণের জন্য নন্দর চাকরীর দুর্ভাবনায় দাড়াইয়া গিয়াছে। অতিমাত্রায় ভঙ্গি নিয়া মানুষ যখন মন্দিরে ঠাকুরকে প্ৰণাম করিতে যায়, পথের ধারে ফেলিয়া রাখা পথ বাধানোর বাড়তি পাথরটাকে ব্যাকুল আগ্রহে প্ৰণাম করা তার পক্ষে সম্ভব বৈকি । যশোদাকে পিড়ি পাতিয়া জাকিয়া বসিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময়ের সঙ্গে আলাপ জুড়িতে দেখিয়া তার দিদি গম্ভীরমুখে কোথায় উঠিয়া চলিয়া গিয়াছিল, এতক্ষণে একটা কলাই-কার। প্লেটে আম কাটিয়া অনিয়া সামনে রাখিল । নাম তার সুধীরা । গাম্ভীৰ্য্য ও ধীরতার তার সত্যই তুলনা নাই । যশোদাকে সে পছন্দ করে না, আমলও দেয় না—আমল পাওয়ার জন্য যশোদার কিছুমাত্র চেষ্টা না থাকায় যশোদাকে সে আরও বেশী অপছন্দ করে। এককালে একজন আধাহাকিমের গৃহিণী ছিল, এখন বিধবা হইয়াছে। বিধবাও হইয়াছে প্ৰায় পাচ-সাত বছর, কিন্তু গিল্পী গিল্পী ভাবটা এত বেশী বজায় আছে বলিবার নয়। বাড়াবাড়িটা বোধ হয় এইজন্য যে আসল যা ছিল তার ভিতরটা হইয়া গিয়াছে ফাঁপা, বজায় আছে শুধু ভাবটুকু ফাকি ফাকিতে সেটা উঠিয়াছে ফাপিয়া । যশোদা বলে, “নতুন বৌকে দেখছি না, আসে নি বৌ বাপের বাড়ী থেকে ?” পাখা নাড়িয়া আমের মাছি তাড়াইতে তাড়াইতে মুখ না ফিরাইয়াই সুধীরা সংক্ষেপে বলে, “এসেছে।’ ‘ওমা, কবে এল ?? জানি নি তো !” 99 caric যশোদা উঠিয়া দাড়াইয়া বলে, “ওপরে আছে বুঝি ? যাই, চেনা করে আসি।” সুধীরা অসন্তুষ্ট হইয়া বলে, “নতুন বৌ-এর সঙ্গে আবার চেনা করবে কি বাছা ? רטאא