পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী সত্যপ্রিয় হঠাৎ যেন বড় সরল হইয়া গিয়াছে, যশোদার সঙ্গে যেন তার অনেকদিনের পরিচয় । স্নানমুখে একটু হাসিয়া বলিল, “তুমি জান না। যশোদা, আমার চাকর বাকরের দোষ দেখিয়ে দেবার সাহস পৰ্য্যন্ত অনেকের হয় না । যাদের কোনদিন একটি পয়সা পাবার ভরসা নেই। যারা চায়ও না একটি পয়সা, তারা পৰ্য্যন্ত ভয়ে মরে আমি পাছে চটে যাই I/ একথার জবাবে যশোদা কিছু বলিল না । প্রত্যাশা না থাকে, সত্যপ্ৰিয় চটিলে যে ভয়ের কারণ আছে এটুকু সেও বোঝে। টাকা অনেক কিছু করিতে পারে। তার বাড়ীর কাছেই এমন দু’একজন মানুষ বাস করে যাদের হাতে মোটে শ'খানেক টাকা গুজিয়া দিলে একদিন এই সত্যপ্ৰিয়র মাথাটা ফাটাইয়া কয়েক মাস জেল খাটিয়া আসিতে রাজী হইয়া যাইবে । টাকার পরিমাণটা বেশী করিলে একেবারে খুন করিয়া ফাসি-কাঠে ঝুলিবার ঝুকিটা নিতেও হয়তো রাজী হইয়া যাইতে পারে। এরা সব নীচুস্তরের জীব, কিন্তু উচুস্তরেও এমন কত জীব আছে, যারা এদেরই রকমফের, হাতে কিছু টাকা গুজিয়া দিলে যারা খুন না করিয়াও মানুষের এমন সৰ্ব্বনাশ করিতে পারে, যা খুন করার ও বাড়া। এমন শক্তি যে টাকার, সত্যপ্রিয় সেই টাকা গাদা করিয়াছে। প্ৰত্যাশা। যারা করে না, তারাও তাকে ভয় করিবে বৈকি। তা’ছাড়া, প্ৰত্যাশা করা না করার প্রশ্নই কেবল নয়, গেরুয়া কাপড় দেখিলেই ধৰ্ম্মভীরু গৃহস্থের যেমন পায়ে লুটাইতে ইচ্ছা হয়, বড়লোককে ভয় আর খাতির করা সেইরকম একটা সংস্কারে দাড়াইয়া গিয়াছে মানুষের । পরদিন দুপুবেলা কীৰ্ত্তনের অবসাদে নন্দ ঝিমাইতেছে, কোথা হইতে সুবৰ্ণ আসিয়া হাজির । ‘একটু কীৰ্ত্তন গাইবে ? একটুখানি ?” উত্তেজনা সে যেন চাপিয়া রাখিতে পারিতেছে না, চোখে-মুখে ফুটিয়া বাহির হইতেছে। যশোদা যে ঘরের অন্যদিকে চৌকীতে বসিয়া জামা সেলাই করিতেছিল, তার চোখে পড়িয়াজে কি না সন্দেহ। একটা ঘরে ঢুকিয়া সেই ঘৱেই যশোদার মত একটি মানুষকে চোখে না পড়ার মত অবস্থা, আবেগ একটু বেশীরকম উথলাইয়া না উঠিলে হওয়া সম্ভব নয়। ves S